গত বছর অগস্টের ২৯ তারিখ ল্যানসেট পত্রিকায় বেরোয় গবেষণাপত্রটি। বৃক্কে কোভিড সংক্রমণ সংক্রান্ত লেখা, বেশ দাগ কেটে যাওয়ার মতোই। গবেষণাপত্রটি জার্মান চিকিৎসক ফ্যাবিয়ান ব্রাউন এবং আরো ১৭ জনের। তাতে বলা হল, ৬৩ জন কোভিড রোগীর কিডনির টিস্যুর ময়নাতদন্তে স্পষ্ট, এই অঙ্গে করোনার বাড়বৃদ্ধি ঘটছে। এবং কোভিডের ফলে কিডনির গুরুতর অসুখ বা অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরির সম্ভাবনাও থাকছে। সেই গবেষণার পরও সংশয়ের রেশ পুরো যায়নি? সত্যি কি কিডনিতে করোনা হয় নাকি? গবেষকরা এবার তারই নিরসন ঘটালেন। হ্যাঁ, কিডনিতে এই মারণ ভাইরাসটি পুরোমাত্রায় হামলা করে, স্পস্টভাবে জানিয়ে দিলেন তারা।
কী ভাবে স্পস্ট-কথা?
রীতিমতো কিডনির কোষ ল্যাবে তৈরি করে গবেষকরা তাতে করোনাভাইরাস ছেড়ে দিয়ে দেখালেন– সংক্রমণ ঘটছে। এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজি বা জেএএসএন-এ। গবেষণাটি ইসরাইলের শেবা মেডিক্যাল সেন্টারের ডক্টর বেঞ্জামিন ডেকেলের নেতৃত্বে। ল্যাবের ডিশে কিডনির কোষ তৈরি করেন গবেষকরা, তার পর তাতে কোভিডের জীবাণুর সংক্রমণ-প্রচেষ্টা। দেখা গেল, পূর্ণ বয়স্ক মানুষের কিডনির কোষে এই ভাইরাস ঢুকছে, সংক্রমিত করছে, বংশ বিস্তার ঘটাচ্ছে।
জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান সোসাইটি অফ নেফ্রোলজির ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, কিডনির কোষগুলিতে উচ্চ মাত্রায় ইন্টারফেরন থাকে, সংক্রমণ ঘটলে কোষ থেকে ওই ইন্টারফেরনের অণুগুলির নিঃসরণ ঘটছে। পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে কিডনিতে তৈরি হচ্ছে প্রদাহ।
ইন্টারফেরন কী?
করোনাকালের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সাইকোটাইন শব্দটি যে চিনেবাদাম। মুখে মুখে ঘুরছে। ঘুরছে সাইকোটাইন ঝড়ও। বলা হচ্ছে, এই ঝড় আটকাতেই ব্যবহার করা হচ্ছে স্টেরয়েড। মাত্রাতিরিক্ত যে ওষুধের ব্যবহার মৃত্যুও ডেকে আনছে বলেও শোনা যাচ্ছে। ইন্টারফেরন হল এক ধরনের সাইটোকাইন। এর কাজ কী? ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঘটলে কোষে উদ্দীপনা তৈরি হয়, কোষ থেকে ইন্টারফেরন বের হতে থাকে তখন। এটি এক ধরনের প্রোটিনের অণু। আশেপাশের কোষগুলিকে ভাইরাস আক্রমণের সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয়। আর কোষের ভিতর ভাইরাসের বংশবৃদ্ধিতে ইন্টারফেয়ার বা বাধা দেয়ার ক্ষমতা আছে এই ধরনের সাইটোকাইনের। আর সে জন্যই ওই নাম হয়েছে।
কী ভাবে স্পষ্ট কিডনিতে কোভিড?
ল্যাবে তৈরি কিডনির কোষে করোনাভাইরাস যে ভাবে ইন্টারেফরনের নিঃসরণ ঘটাল, তা থেকেই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল, কিডনির কোষে করোনাভাইরাস কামড় বসাচ্ছে। এখন যদি বৃক্কে আগে থেকেই কোনও ইনজুরি বা জটিল সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে কোভিড তা বাড়িয়ে দেবে– তাও বোঝা গেল ল্যাবরেটরিতে। তবে, সে ক্ষেত্রে, গবেষকরাই বলছেন, এই ভাইরাস কিডনি সেলের কিলিং ফ্যাক্টর হবে না।
কী বলছেন ডক্টর ডেকেল?
কোনো কোভিড রোগীর অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি বা একেআই ডেকে আনার সম্ভাবনা করোনাভাইরাসের কম। রোগীর এই ধরনের কোনো সমস্যা আগে থেকেই থেকে থাকে, তবে তা বাড়িয়ে তুলছে এই জীবাণু। কোনো কোভিড রোগীর অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি থাকলে শুরুতেই যদি লাগাম দেওয়া যায়, মানে ঠিকমতো চিকিৎসা শুরু করা যায়, ক্ষতির আশঙ্কা হতে পারে সামান্য।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস