দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। কর্মসংস্থানের হারে তুলনামূলক এগিয়ে আছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে পিছিয়ে থাকলেও তুলনামূলক বেশি বেতনে চাকরিতে প্রবেশ করছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরির বাজারে ভালো করার অন্যতম কারণ হলোÑ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি প্রোগ্রামে শুধু ওই সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে, যেসব শাস্ত্রের বাণিজ্যিক দর রয়েছে। এর প্রমাণ মিলল বিআইডিএসের জরিপে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শতাধিক। দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবির্ভাব একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিকশিত হলেও বাংলাদেশে এর প্রচলন আড়াই দশক আগে। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একতরফা ভূমিকা ছিল। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বেসরকারি খাতে যে ভালো মানের উচ্চশিক্ষা দেয়া সম্ভব, তা হাতেগোনা কিছু লোক ছাড়া কেউ বিশ্বাস করতেন না। বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা দেয়ার বিপদ নিয়ে অনেকে শঙ্কিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের গ্র্যাজুয়েটরা তুলনামূলক ভালো বেতনে চাকরি পাওয়ায় এ আশঙ্কা অমূলক প্রমাণিত হয়। লাখ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করায় সহজে প্রতীয়মান হয়, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভালো না হলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
যেসব কারণে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশ ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে দু’টি কারণ প্রণিধানযোগ্যÑ উচ্চশিক্ষার বর্ধিত চাহিদা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না এবং সরকারি তহবিলের অভাব অর্থাৎ দ্রুত বর্ধনশীল চাহিদা পূরণে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, সরকারের পক্ষে বাজেটে তা বরাদ্দ দেয়া সম্ভব না হওয়া। এসব কারণ বিবেচনায় উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণে সরকারের প্রচেষ্টার পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইনগত পথ উন্মুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় উচ্চশিক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার হার কমে আসছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছেন। উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান জাতীয় চাহিদা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাদ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই পরস্পর পরিপূরক হিসেবে সহাবস্থান করে যেতে হবে। তবে ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা ব্যয়বহুল। সচ্ছল পরিবারের সন্তানরাই এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার সামর্থ্য রাখে। আশার কথা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে মোট রেজিস্টার্ড শিক্ষার্থীর শতকরা কমপক্ষে ৬ ভাগকে মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল বিবেচনায় বিনা বেতনে অধ্যয়নের অনুমতি দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় বিধানটি প্রতিপালন করে থাকে।
বিআইডিএসের গবেষণা ফলাফলের আলোকে বলা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকারের জোরালো নজরদারি বাড়ানো হলে বিশ্বমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশেও গড়ে ওঠা সম্ভব। আর তখন দেশে দক্ষতাসম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের মানবসম্পদের ঘাটতি ঘুচিয়ে বাইরে রফতানি করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এটি সম্ভব হলে রেমিট্যান্স ব্যাপকভাবে বাড়বে, যা জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে অধিকতর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।