উন্নত চিকিৎসায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত রবিবার অনুষ্ঠিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গত রবিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন হয়েছে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা দরকার। এজন্য দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করে বিএনপি।’ জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আলাপ-আলোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
পরিবারের পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় প্রথমবারের মতো খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে সিদ্ধান্ত নিল বিএনপি।
সম্প্রতি ৫৪ দিনে পর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় আসেন খালেদা জিয়া। সেখানেই এখন তার চিকিৎসা চলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক বোর্ডের প্রধান ডা. এএফএম সিদ্দিকীও জানিয়েছেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত হলেও কোভিড-পরবর্তী বেশ কয়েকটি জটিলতায় ভুগছেন। তিনি কোনোমতেই ঝুঁকিমুক্ত নন। তার লিভার, কিডনি ও অন্য জটিলতার চিকিৎসা বিদেশে কোনো উন্নত কেন্দ্রে প্রয়োজন। দেশে যার কোনো সুযোগ তুলনামূলকভাবে কম।
স্থায়ী কমিটির সভায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ, করোনার টিকা, ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-গ্রেপ্তার, সাংগঠনিক নানা বিষয়সহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সভায় করোনাকালীন লকডাউনে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টিকা সংগ্রহের রোডম্যাপ চায় দলটি সভা মনে করে, করোনার সব চেয়ে সংক্রমণশীল ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টর প্রভাবে দেশে তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার হঠাৎ করেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, উদাসীনতা, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে ফেলেছে।
সভা মনে করে, টিকার অপ্রতুলতা মানুষের জীবনকে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হলেও ২৬ কোটি টিকা প্রয়োজন, যার শতকরা ৩ ভাগ সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। নিজস্ব দলীয় ব্যক্তির মালিকানার কোম্পানিকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়ায় গোটা জাতি আজ স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। টেস্ট, বেড, অক্সিজেন, আইসিইউ, ভেন্টিলেটারের অভাব জেলা হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকার আরোপিত প্রথমে সাধারণ ছুটি ও অপরিকল্পিত লকডাউনে পরিস্থিতি ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটি সভায় অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানায়। সভা জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও নির্বিচারে গুলিতে শতাধিক ছাত্র আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দাবি করে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি, ভোজ্যতেলের দাম গত ৬ মাসে প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা (৩৩ শতাংশ) বৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করে স্থায়ী কমিটির এ সভা। একই সঙ্গে অবিলম্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর আরোপিত সকল প্রকার ট্যাক্স ও ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে নেওয়ার দাবি জানায়।
স্থায়ী কমিটির সভায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়াও আরও অংশ নেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^রচন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।