যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান রাজ্যের হ্যামট্রামিক সিটির প্রাইমারি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চারজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। মেয়র পদে লড়ছেন এনএএসিপি হ্যামট্রামিক ব্রাঞ্চের প্রেসিডেন্ট কামাল রহমান। তিনি বিগত ২০১৭ সালের নির্বাচনে একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এদিকে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক ড্রিস্টিক-১৪ চেয়ার মুহিত মাহমুদ, ডেমোক্রেটিক ডিস্ট্রিক-১৪ সাবেক প্রেসিডেন্ট আরমানি আছাদ ও মিশিগান স্টেট আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি আবু আহমেদ মুছা।
জানা গেছে, আগামী ৩ আগস্ট হ্যামট্রামিক সিটির প্রাইমারি নির্বাচনের সরাসরি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই সিটি ১০০ বছরের পুরনো। ২ মাইল স্কয়ার আয়তনের সিটিতে সবচেয়ে বেশি দাপট অ্যারাবিক ও বাংলাদেশিদের। বর্তমানে দুইজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলম্যান রয়েছেন।
মেয়রসহ অন্য কাউন্সিলররা ইয়েমেনি ও পোলিশ জাতির গোষ্ঠীর। যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধ্যুষিত সিটি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত পেয়েছে হ্যামট্রামিক। এবার এ সিটির প্রাইমারি নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই সিটিতে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একমাত্র মেয়র প্রার্থী কামাল রহমান। তিনি ১৯৮৬ সালে কিশোর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। হ্যামট্রামিক হাইস্কুল থেকে স্কুল গ্রাজুয়েশন এবং ওয়েনকাউন্টি কমিউনিটি কলেজ (WCCC)থেকে কলেজ গ্রাজুয়েশন করেন। এরপর ওয়ালস কলেজ থেকে ফাইন্যান্সে ব্যাচেলর ডিগ্রি করেন। সিটি অব ডেট্রয়েট গভর্নমেন্ট অফিসে ফাইন্যান্স ম্যানেজার পদে কর্মরত আছেন।
কামাল রহমান দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার মূলধারার রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকে জনকল্যাণে কাজ করছেন। NAACP হ্যামট্রামিক ব্রাঞ্চের প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ফ্রন্টইয়ার ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি বোর্ড অব প্রেসিডেন্ট। মিশিগান কোয়ালিশন অব হিউম্যান রাইচ বোর্ডের মেম্বার দীর্ঘ ৬ বছর ধরে। ওয়েনকাউন্টি কমিউনিটি কলেজ (WCCC)বোর্ড অব ট্রাস্টির মেম্বার নির্বাচিত হন।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের SAALT অর্গানাইজেশন প্রদত্ত চেঞ্জ মেইকার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন কামাল রহমান। এছাড়া বাংলাদেশি কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠন ব্যাপাকের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন।
মেয়র প্রার্থী কামাল রহমান যুগান্তরকে বলেন, ২০১৭ সালে একই পদে নির্বাচন করে মাত্র ৫৩ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। ওই নির্বাচনে আমাদের কমিউনিটি থেকে মেয়র পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবার আমিই একমাত্র প্রার্থী। কমিউনিটি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমার পক্ষে রায় দেবে এটা এখন সময়ের দাবি। সরাসরি গিয়ে সমস্যা নিরূপণ, মানুষের দাবি শুনেছি এবং সেই আলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করছি। তবে হ্যামট্রামিক সিটির জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রাধিকার দেবেন বলে জানালেন।
কাউন্সিলর প্রার্থী মুহিত মাহমুদ পেশায় একজন সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিয়াল। বাংলাদেশে ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। আমেরিকা আসার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ডিস্ট্রিক-১৪ ভাইস চেয়ার এবং বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্রসাস (বিএডিসি) প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। লেবার ইউনিয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে। এছাড়া গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস ইউএসএ এর প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন।
মুহিত মাহমুদ বলেন, পাবলিক সার্ভিস ও কমিউনিটি সার্ভিসে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। এটা পারিবারিক চর্চা। তার পিতাও দেশের বাড়িতে একসময় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। কমিউনিটির লোকজনের উৎসাহ ও প্রেরণায় প্রার্থী হওয়ার কথা জানালেন তিনি। তবে নির্বাচনে জয়ী হলে হেমট্রামিক সিটির সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করবেন।
কাউন্সিলর প্রার্থী আরমানি আছাদ পেশায় ব্যবসায়ী। ১৯৯২ সালে আমেরিকা আসেন। এরপর ব্যাচেলর ফাইন অ্যান্ড আর্টস গ্রাজুয়েশন করেন। ব্যবসার পাশাপাশি কিমিনাল জাস্টিস ওপর পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী সংগঠন বিজনেস অ্যাসোশিয়েশন অব মিশিগান এর প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি পদে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক-১৪ সাবেক প্রেসিডেন্ট আরমানি আছাদ। বাংলাদেশ-আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্রসাস (বিএডিসি) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস ইউএসএ সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। নর্থ অ্যাসোশিয়েশন স্যোশাল ট্রাস্টের (নাস্ট) ফাউন্ডার হিসেবে কাজ করছেন।
আরমানি আছাদ বলেন, কমিউনিটির ঐক্যটাই আমার মূল লক্ষ্য। এনিয়ে কাজ করবো। এছাড়া করোনাকালীন লকডাউনের সময় কমিউনিটির সমস্যাপীড়িত মানুষের ঘরে ঘরে নানান রকম সহায়তা পৌঁছে দিয়েছি। কমিউনিটির লোকজনের জন্য সহজপন্থায় ভ্যাকসিন গ্রহণের ব্যবস্থা করেছি। মানবতা-ন্যায়ের পক্ষে এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন কাজ করে যাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কাউন্সিলর প্রার্থী আবু আহমেদ মুছার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, আবু আহমেদ মুছা ২০১৪ সালের হ্যামট্রামিক সিটির নির্বাচনে কাউন্সিল পদে জিতেছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের নির্বাচনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। তিনি আওয়ামী লীগ মিশিগান স্টেট শাখার সেক্রেটারি পদে রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত থেকে কাজ করছেন।