বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন

‘সু চির জন্য দোয়া করতাম, তিনি আজ খুনিদের পক্ষে’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৯৫ বার

নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে(আইসিজে) মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিচার। তিনদিন চলবে মামলার শুনানি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানিতে অংশ নিতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের দল গেছে নেদারল্যান্ডে।

কিন্তু যারা এই গণহত্যার শিকার তারা কী বলছেন? চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভূক্তভোগী রোহিঙ্গাদের সাথে এই বিচারের বিষয়ে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টারা। রোহিঙ্গাদের একটাই দাবি- যারা আমাদের স্বজনকে হত্যা করেছে, কোলের শিশুকে আগুনে ছুড়ে মেরেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের শাস্তি চাই।

২০১৭ সালের সেই অভিযানে নুর আলমের ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনারা। ৬৫ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে করে বলেন, ‘এক সময় অং সান সু চি ছিলেন শান্তির প্রতীক। আমাদের আশা ছিলো তিনি ক্ষমতায় এলে নির্যাতন বন্ধ হবে। আমরা তার জন্য দোয়া করেছি; কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেই গণহত্যার প্রতীকে পরিণত হলেন। আমাদের রক্ষা করার বদলে, তিনি হত্যাকারীদের সাথে হাত মেলালেন। এখন তিনি হত্যাকারীদের রক্ষা করতে গেছেন। তাকে আমরা ঘৃণা করি, তার জন্য এটি লজ্জার।’

এই বৃদ্ধ বলেন, সু চি ও তার সেনাবাহিনী এবং আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। এই দিনের জন্য আমি অপেক্ষায় আছি। তাদের শাস্তি হয়েছে সেটা দেখতে পারলে আমার জীবনে আর কোন আক্ষেপ থাকবে না

১৯ বছর বয়সী মোহাম্মাদ জোবায়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিক্ষা কেন্দ্রে শিশুদের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতন দেখেছি আমরা। আমাদের চোখের সামনে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পর আমরা পালিয়ে এসেছি। এটিই সময় বিশ্বসম্প্রদায়ের জন্য মিয়ানমারের বিচার করার। তারা যে নারকীয় কাণ্ড করেছে- তার বিচার হতেই হবে। রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে গণহত্যায় তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

জোবায়ের আরো বলেন, সু চি এক সময় বলতেন তিনি ক্ষমতায় আসার আগে ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সেনারা। এখন তিনিই সেই সেনাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এটি লজ্জাজনক! আমরা মামলার শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি….. এখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুব ভালো নয় তাই আমরা সেটি শুনতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।

রশিদ আহমেদের পরিবারের ১২ সদস্যকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনারা। ৩৫ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, একমাত্র উপযুক্ত শাস্তিই আমার সান্ত্বনা দিতে পারবে। যাদের হারিয়েছি তাদের তো আর কোনদিন ফিরে পাবো না। কিন্তু খুনিরা শাস্তি পেলে তাদের রুহ শান্তিতে থাকবে।

৩১ বছর বয়সী মমতাজ বেগম বলেন, তারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমাকে ধর্ষণ করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার ছয় বছর বয়সী মেয়েটার মাথায় কোপ মেরেছে। শুনেছি সু চি ও তার সেনবাহিনীর বিচার শুরু হবে। আমরা চাই তাদের শাস্তি যথাযথ হোক। নিরীহ মানুষগুলোকে, নিরাপরাধ শিশুদের কেন তারা হত্যা করেছে? কেনা নারীদের ধর্ষণ করেছে- আমরা এর বিচার চাই।

আরেকজন নির্যাতিত নারী জমিলা বেগম(২৯)। ২০১৬ সালে তার স্বামীকে হত্যা ও তাকে ধর্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, সেনারা আমার বাড়িতে এসে স্বামীকে হত্যা করে ঘরটা পুড়িয়ে দিল। তিন সেনা আমাকে একটি ঝোপের মধ্যে নিয়ে বন্দুকের মুখে ধর্ষণ করেছে যতক্ষণ আমার হুশ ছিলো।

এরপর বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়ার কারণে সেনারা আমাকে খুঁজে পেতে পোস্টারিং করেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করেছে। জীবন বাঁচাতে আমি পালিয়ে এসেছি বাংলাদেশে।

জমিলা বলেন, এই নৃশংসতার ন্যায় বিচার চাই। যারা আমাকে ধর্ষণ করেছে, স্বামীকে হত্যা করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানকে আগুনে ছুড়ে মেরেছে তাদের সবার বিচার চাই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com