নেদাল্যান্ডের দ্য হেগ শহরে চলছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া এই গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারকে আদালতে নিয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে(আইসিজে) শুরু হয় মামলার শুনানি। মামলায় বাদি গাম্বিয়া, আসামি মিয়ানমার ছাড়াও ওআইসিসহ বেশ কিছু দেশ ও সংস্থা অংশ নিয়েছে। তাদের বেশিরভাগই গাম্বিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে গণহত্যা প্রমাণে সহযোগিতা করছে।
এছাড়া হেগ শহরে উপস্থিতি হয়েছে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী এবং মিয়ানমার সরকারের সমর্থকেরা।
বিচারক কারা
আইসিজেতে ১৫ জন বিচারক থাকেন। বিচারকদের নির্বাচন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ। এই আদালতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন সোমালিয়ার বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনের বিচারপতি ঝু হানকিন।
আদালতে এই মামলায় নিয়মিত ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুজন অ্যাডহক বিচারপতি। ওই দুজন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত। নিয়মানুয়ায়ী এদিন শুরুতেই দুই অ্যাডহক বিচারপতি গাম্বিয়ার নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস শপথ নিয়েছেন।
অন্য বিচারকরা হলেন স্লোভাকিয়ার বিচারপতি পিটার টমকা, ফ্রান্সের বিচারপতি রনি আব্রাহাম, মরক্কোর মোহাম্মদ বেনুনা, ব্রাজিলের অ্যান্টোনিও অগাস্টো কানকাডো ত্রিনাদে, যুক্তরাষ্ট্রের জোয়ান ই ডনোহু, ইতালির গর্জিও গাজা, উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্দে, ভারতের দলভির ভান্ডারি, জ্যামাইকার প্যাট্রিক লিপটন রবিনসন, অস্ট্রেলিয়ার রির্চাড ক্রর্ফোড, রাশিয়ার কিরিল গিভরগিয়ান, লেবাননের নওয়াফ সালাম এবং জাপানের ইউজি ইওয়াসাওয়া।
কোন পক্ষে কারা আছেন
আদালতে অং সান সু চি মিয়ানমারের পক্ষে হাজির হয়েছেন। আদালতে গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। গাম্বিয়াকে সমর্থন দিতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কূটনীতিকেরাও উপস্থিত হয়েছেন। রুয়ান্ডার গণহত্যার জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তামবাদুর সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ যুক্তরাজ্যের অধ্যাপক ফিলিপ স্যান্ডসসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ব পরিসরে নেতৃস্থানীয় আইনজ্ঞের শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পল এস রাইখলার শুরুতেই তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। গণহত্যার বিভিন্ন আলামত উপস্থাপন করেন তিনি। এছাড়াও গাম্বিয়ার পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেন ব্রিটেনের প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী তাফাদজ পাসিপান্দো, প্রফেসর পায়াম আখাভান, অ্যান্ড্রু লোয়েনস্টেইন, ও আরসালান সুলেমান।
অন্য দিকে মিয়ানমারের আইনি দলের প্রধান হিসেবে যুক্ত হয়েছেন গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আইনে বিশেষজ্ঞ কানাডার মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী অধ্যাপক উইলিয়াম সাবাস। মিয়ানমারের অ্যাটর্নি জেনারেল তুন তুন ও, দুই জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক দুই আইনজীবী যুক্ত আছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলে।
যেভাবে চলবে বিচার
মঙ্গলবার শুরুতে দুই অ্যাডহক বিচার শপথ নেয়ার পর শুরু হয় বিচারিক কার্যক্রম। গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী তামবাদু বক্তব্য শুরুতে তার আবেদনের পক্ষে কারা কী বিষয়ে বলবেন, তা তুলে ধরেন। এরপর শুরু হয় আইনজীবিদের বক্তব্য। মঙ্গলবার গাম্বিয়ার যুক্তি উপস্থাপনের পর আদাল মুলতবি করা হয়।
বুধবার মিয়ানমার তার অবস্থান তুলে ধরবে। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া এবং বিকেলে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন ও চূড়ান্ত বক্তব্য পেশ করবে। তারপর বিষয়টি চলে যাবে বিচারকদের হাতে।
রায় হবে কবে
উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের পর শুরু হবে রায়ের অপেক্ষা। বিচারকরা যুক্তি তর্কের ভিত্তিতে রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্ত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। অর্থাৎ যুক্তিতর্ক ও যুক্তি খণ্ডন শুনে বেশির ভাগ বিচারক যে বিষয়ে মত দিবেন- সেটিই হবে আদালতের রায়। তবে রায় কবে হবে সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। অন্তত ৮ সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে মামলার রায় আসতে।