চর্মরোগে কমবেশি সবাই ভোগেন। গরমকালেই এ জাতীয় রোগ বেশি দেখা দেয়। এ ছাড়া অপরিষ্কার ও ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে বসবাস চর্মরোগের একটা অন্যতম কারণ। নিয়ম মেনে চললে রোগের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন-
ঘামাচি : গরমের সময় ঘামাচি একটি সাধারণ সমস্যা। জাতীয় ই-তথ্যকোষে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘামাচি সাধারণত তখনই হয়, যখন ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ঘাম বের হয় না ও ত্বকের নিচে ঘাম আটকে যায়। ফলে ত্বকের ওপরিভাগে ফুসকুড়ি ও লাল দানার মতো দেখা যায়। কিছু ঘামাচি খুব চুলকায়। ঘামাচি সাধারণত এমনি সেরে যায়। তবে ঘামাচি সারানোর জন্য ত্বক সব সময় শুষ্ক রাখতে ও ঘাম শুকাতে হবে।
ব্রণ : সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এ রোগটি দেখা দেয়। তাই এ রোগটি টিনএজারদের রোগও বলা হয়ে থাকে। ১৮ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়ের মধ্যে এ রোগটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে তৈলাক্ত, ঝাল ও ভাজাপোড়া খাবারসহ চকোলেট, আইসক্রিম ও অন্যান্য ফাস্টফুড খাওয়া কমাতে হবে। এ ছাড়া বেশি করে পানি ও শাকসবজি খেতে হবে।
দাদ : শরীরের যে কোনো স্থান ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারে। এটিকে বলে দাদ। এটি আক্রমণ করে বসতে পারে মাথার চামড়া, হাত-পায়ের আঙুলের ফাঁক কিংবা কুঁচকিতে। এটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত স্থান চাকার মতো গোলাকার হয় ও চুলকায়। মাথায় দাদ দেখতে গোলাকার হয় এবং আক্রান্ত স্থানে চুল কমে যায়। প্রতিকার পেতে সাবান ও পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান প্রতিদিন ধুতে হবে। এ ছাড়া আক্রান্ত স্থান শুকনো রাখা জরুরি। অনেক সময় ব্যবহৃত সাবান থেকেও দাদ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার কিছুদিন বন্ধ রাখতে হবে।
পাঁচড়া : শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়। পরিষ্কার কাপড়চোপড় ব্যবহার ও নিয়মিত গোসল করলে খোসপাঁচড়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
অ্যাকজিমা : অ্যাকজিমা হলো ত্বকের এমন এক অবস্থা, যেখানে ত্বকে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। একেক ধরনের অ্যাকজিমার লক্ষণ একেক রকম। তবে সাধারণভাবে লালচে, প্রদাহযুক্ত ত্বক, শুষ্ক ও খসখসে ত্বক, ত্বকে চুলকানি, হাত-পায়ের ত্বকের মধ্যে ছোট ছোট পানির ফুসকুড়ি ইত্যাদি হলো অ্যাকজিমার লক্ষণ।
ত্বকের আরও কয়েকটি রোগ হলো-
অ্যাকজিমা : ডিটারজেন্ট, সাবান অথবা শ্যাম্পু থেকে অ্যাকজিমার সংক্রমণ হতে পারে। অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠা-া ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা আবহাওয়াও অ্যাকজিমার কারণ।
সোরিয়াসিস : সোরিয়াসিস ত্বকের একটি জটিল রোগ। তবে এটি কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও; সন্ধি, নখ ইত্যাদি। সাধারণত ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ত্বকের কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এ সমস্যা দেখা দেয়। রোগ যত পুরনো হয়, ততই জটিল হতে থাকে। তাই দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা করা জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন চিকিৎসা নিতে হয়। সোরিয়াসিস বংশগতভাবেও হতে পারে।
আর্সেনিকের কারণে চর্মরোগ : আর্সেনিকযুক্ত পানি খেলে ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- ত্বকের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগ কিংবা পুরো ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে, হাত ও নখের চামড়া শক্ত এবং খসখসে হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা-কালো দাগ দেখা দেওয়াসহ হাত ও পায়ের তালুর চামড়ায় শক্ত গুটি বা গুটলি দেখা দিতে পারে। তবে চিন্তার বিষয় হলো, আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের শেষ পরিণতি হতে পারে লিভারের কর্মক্ষমতা লোপ পাওয়া, ত্বক-ফুসফুস-মূত্রথলির ক্যানসার হওয়া, কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া ইত্যাদি। তাই রোগ হলে যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকুন।
লেখক : চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন
সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ