দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। শুরুর দিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে এই মহামারী প্রাণক্ষয় করলেও এখন তা প্রায় সমানতালে চলছে এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। এমন পরিস্থিতিতে সব দেশের কাছেই মহার্ঘ বস্তু হয়ে উঠেছে কোভিড ১৯-এর টিকা; কিন্তু ধনী দেশগুলোর দৌরাত্মে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে টিকা পৌঁছাচ্ছে না। টিকার এই বৈষম্য নিয়ে একাধিকবার অভিযোগও করেছে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও); তাতেও কাজ হয়নি।
সামান্য কিছু টিকা দান করলেও এখনো কোটি কোটি ডোজ মজুদ আছে ধনী দেশগুলোর কাছে। তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ ধনী দেশগুলোর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আরও ১২০ কোটি ডোজ টিকা মজুদ থাকবে; কিন্তু এই মজুদের বড় অংশ অপেক্ষা দরিদ্র দেশগুলোতে অনুদান দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
জরিপ বলছে, বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে টিকা রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ডোজ। এর মধ্যে ৩৬ কোটি ডোজ টিকা কোথাও অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। এই বছরের শেষ নাগাদ এসব দেশের কাছে মজুদ থাকবে ১২০ কোটি ডোজ। এর মধ্যে ১০৬ কোটি ডোজই অনুদানের পরিকল্পনা তাদের নেই।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা এবং জাপানে টিকা সরবরাহের সার্বিক চিত্র বিশ্লেষণ করে এয়ারফিনিটির সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি প্রকাশ হবে আজ মঙ্গলবার। এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা ও জাপানে টিকার সরবরাহকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এয়ারফিনিটি বলছে, টিকার এমন বৈষম্য নিয়ে এরই মধ্যে অনেক স্বাস্থ্য ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকর্তারা নিন্দা জানিয়েছেন। জাতিসংঘ কোভ্যাক্সের আওতায় দরিদ্র দেশগুলোতে অন্তত ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা নিশ্চিতে ২০০ কোটি ডোজ সরবরাহ করতে চেয়েছিল; কিন্তু ধনী দেশগুলো টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে সে পথ সংকুচিত করে তাদের মজুদ সম্প্রসারণ করেছে। গত রবিবার জি-২০ গ্রুপের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের এক বৈঠকে ডব্লিউএইও প্রধান ডা. টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়েসুস বলেন, বিশ্বজুড়ে টিকা-বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে পাঁচশ কোটির বেশি ডোজ টিকা প্রয়োগ হয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই প্রয়োগ হয়েছে মাত্র ১০ দেশে। অন্যদিকে আফ্রিকায় মাত্র দুই শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া গেছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।