যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার ২০তম বার্ষিকী আজ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশটিতে একসঙ্গে চারটি সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি বিমান নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস করে। একই দিন ভার্জিনিয়ার আরলিংটনে তৃতীয় বিমান হামলা করে।
এসব হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হন। ছয় হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। ১০ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো ধ্বংস হয়। কিন্তু ২০ বছর পরও নাইন-ইলেভেনের (৯/১১) ক্ষত সারেনি।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পেছনে ওসামা বিন লাদেন ও তার সন্ত্রাসী দল আল কায়দা জড়িত ছিল। ৯/১১ নামে খ্যাত ওই হামলার বিপরীতে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সন্দেহের আওতায় থাকা জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে। এসব যুদ্ধে বিভিন্ন দেশে ৯ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ছিল মঙ্গলবার। এদিনের সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৬০টি দেশের ২ হাজার ৭৪৯ মানুষ নিহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশিও ছিলেন। সেদিন যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের প্রত্যেকের নাম অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে বিধ্বস্ত টুইন টাওয়ারের স্থলে নির্মিত স্মৃতিসৌধে। একটি জলাধারের চার ধারে নির্মিত উঁচু বেদিতে তাদের নাম উৎকীর্ণ করা।
নাইন-ইলেভেনে সন্ত্রাসী হামলার আশু প্রতিক্রিয়া ছিল আফগানিস্তানে পালটা মার্কিন হামলা। আল কায়দার সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা এখন শেষ। দেশটি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে মার্কিন সেনা। ক্ষমতায় এসেছে তালেবান। কিন্তু ২০ বছর পরও সারেনি সেই নাইন-ইলেভেনের ক্ষত।
যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্তির আগে প্রকাশিত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এক দশকেরও বেশি সময় আগে প্রতিষ্ঠিত কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্টে সম্পৃক্ত ছিল ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স। তাদের সঙ্গে সহপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির দুজন মেধাবী গবেষক স্টফানি স্যাভেল ও ক্যাথরিন লুৎজ।
১ সেপ্টেম্বর ওয়াটসন ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক ইভেন্টে অধ্যাপক ক্যাথরিন বলেন, ‘যুদ্ধটি ছিল দীর্ঘ, জটিল ও ভয়াবহ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে এবং ৮০টিরও বেশি দেশে যুদ্ধ এখনো অব্যাহত রয়েছে।’
শোক ছাড়ছে না : কানেটিকাটের ব্লুমফিল্ডে নিজের বাড়িতে সিন্ডি মিকগিন্টি বলেন, ‘লোকজন প্রায় আমাকে বলে, ২০ বছর তো হয়ে গেল। কিন্তু শোক তোমাকে ছাড়ছে না, এটা তুমি ছাড়তে পারবে না।’ সিন্ডির বয়স এখন ৬৪ বছর, দুই ছেলে ডেভিড আর ড্যানিয়েলকে লালনপালনের জন্য মন কতটা শক্ত করে তাকে লড়তে হয়েছে, সে কথাই তিনি স্মরণ করছিলেন। সেসময় ছেলেদের একজনের বয়স ছিল সাত বছর, অন্যজনের আট।
মিকগিন্টি বলেন, ওরা এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেছে। কিন্তু ওদের বড় করে তুলতে আমাকে অনেক কিছুই করতে হয়েছে। ড্যানিয়েলের বয়স এখন ২৮ বছর, কিছুদিন হলো তিনি বিয়েও করেছেন। মায়ের দুঃখ, ছেলের বিয়ের দিনটাও দেখতে পারেননি মাইক (মিকগিন্টির স্বামী)।
মিকগিন্টি এখন ‘৯/১১ ডে’ নামে একটি আলাভজনক প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক। তিনি বলেন, আমরা চাই ওইদিনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং দেশের জন্য যারা কাজ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের স্মরণে মানুষ ভালো কোনো কাজ করবে। ওই হামলার পর যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আবারও সেই অবস্থান তৈরির এটা একটা উপায়।’