আগামী দিনের আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্তে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির আদলে ধারাবাহিক বৈঠক ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ মঙ্গলবার প্রথম দিনে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের অংশগ্রহণে বেলা সাড়ে ৩টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, জোটের রাজনীতি, দল পুনর্গঠন, আন্দোলনের রূপরেখা কী হওয়া উচিত এই নিয়ে বৈঠকে মত দেবেন নেতারা। আজ দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে ৭০ জন তাদের মত দেবেন। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মত নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হবে। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গেও একই প্রক্রিয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। সবার মতামতের পরই চূড়ান্ত করা হবে আন্দোলনের কৌশল।
বৈঠক সফল করতে গতকাল সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বৈঠক করেছেন। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব আমাদের সময়কে বলেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আমাদের কী করণীয় সব বিষয়ে নেতাদের মতামত নিতে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। মোহাম্মদ শাহজাহান আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে নেতারা মত দেবেন। তবে আমাদের মূল এজেন্ডা আন্দোলন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায় করাকেই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। কারণ, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হলে আমরা ভোটের জন্য যতই প্রস্তুতি নিই তাতে লাভ হবে না। সেই দাবি সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবে সেটা মনে করি না। এজন্য প্রয়োজন আন্দোলন। আমরা এখন সেই পথেই হাঁটছি।
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, করোনাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন নেতার মৃত্যু হয়েছে। অনেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির শঙ্কা, বিদেশে অবস্থান করা এবং কারাবন্দি থাকায় বেশ কিছু নেতা বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন না।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ৬ষ্ঠ কাউন্সিলের পর ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান ৩৫ জন এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৭৩ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই আজকের বৈঠকে দেখা যাবে না। ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান করোনা আক্রান্ত, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন করোনা আক্রান্ত হয়ে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। মোরশেদ খান ও মোসাদ্দেক আলী ফালু বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আবদুস সালাম পিন্টু কারাগারে। বিচারপতি টিএইচ খান ও অধ্যাপক আবদুল মান্নান বয়সের ভারে ন্যূব্জ। এ ছাড়া সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল মান্নান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, আমীনুল হক, রাবেয়া চৌধুরী মারা গেছেন। দেশে নেই শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও ওসমান ফারুক প্রমুখ।
ধারাবাহিক বৈঠকের দ্বিতীয় দিন বুধবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহসম্পাদক এবং তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক। রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করবেন। দলের মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকের পর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ৮১টি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মতামত নেওয়া হবে। এরপর ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল। এর পর তারেক রহমান বিভিন্ন সময়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে সিরিজ বৈঠক করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটিই প্রথম সিরিজ বৈঠক।