নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে মানুষ করে গড়ে তুলেছেন সন্তানকে। করিয়েছেন লেখাপড়া। পরে চাকরি পান শিক্ষকতার। কিন্তু মায়ের মৃত্যুর পর সেই সন্তানই বাধা দিলেন লাশ দাফনে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও সন্তানকে দেখতে চেয়েছিলেন মা। কিন্তু মায়ের মুখ দেখবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামে মৃত মান্নানের স্ত্রী মালেকা বেগম (৬৫) বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার রাতে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বড় ছেলে বেসরকারি ওশিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে দাফন হয়।
স্থানীয়রা জনান, ১৯৯৪ সালে আব্দুল মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরে জমির বণ্টন নিয়ে তাদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইকবাল হোসেন সম্পত্তির মালিকানা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাকে একা জমি লিখে না দেওয়ায় মায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ সময় তার মা তার ছোট ভাইয়ের বাসায় ওঠে, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছোট ছেলেই তার দেখভাল করতো।
ইকবালের ছোট ভাই আমিনুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন তিনিই তার মায়ের দেখভাল করে আসছিলেন। পরে হঠাৎ করে তা মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে সে মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িতে লাশ নিয়ে আসার পর তার বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের লাশ দাফনে বাধা তৈরি করেন। যদিও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তারা লাশ দাফন করেন।
এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন জানান, তার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই তার মাকে তার ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারণায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তবে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত না করেই চলে গেছেন। তিনি এ বিষয়ে আদালতের যাবেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ বলেন, সম্পদের জন্য এভাবে একটি সন্তান তার মায়ের লাশ দাফনে বাধা তৈরি করবে এটা ঘৃণ্য কাজ। এলাকাবাসী হিসেবে আমি লজ্জিত।
শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও মৃত নারী কোভিড পজিটিভ ছিল।