শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন

বিএনপির পরিকল্পনায় বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম, যুগপৎ আন্দোলন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ অক্টোবর, ২০২১
  • ১৩৭ বার

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি আদায়ে বড় ধরনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। সমমনা মিত্র দলগুলোকে বৃহৎ একটি প্ল্যাটফরমে এনে যুগপৎ আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। এর আগে আন্দোলন পরিচালনায় বিএনপির নেতৃত্বে একটি লিয়াজোঁ কমিটি করা হবে। জামায়াতে ইসলামী ইস্যুতে যেসব দলের আপত্তি রয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনে গেলে তা অনেকটা দূর হবে বলে মনে করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বলছেন, জোটগত নয়; যুগপৎ আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। জোটের প্রধান শরিক বিএনপির এই কৌশলকে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইতিবাচকভাবেই দেখছে।

২০-দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আমাদের সময়কে বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা ইতিবাচক। এর সঙ্গে আমি একমত। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও মনে করেন, যুগপৎ আন্দোলনের উদ্যোগটা ভালো। কিন্তু সেই আন্দোলনের চরিত্র কেমন হবে, সেটি বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে।

গত মাসে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠক হয়। এর পর আইনজীবী ও ২২টি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করে তাদের মতামত নেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামী ৮ ও ৯ অক্টোবর বড় পরিসরে আবারও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ইস্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে বিএনপিও তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সংবাদ সম্মেলন করবে। এতে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকবে। এর পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ডান-বাম সব ধারার দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করবেন দলের নীতিনির্ধারকরা। ২০-দলীয় জোটের দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি রূপরেখা করা হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আওয়ামী লীগ ৩০ আসনও পাবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনকে তারা ভয় পায়। আওয়ামী লীগ আবারও ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে চায়। এবার এটি হবে না। এবার অবশ্যই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন হতে হবে। যদি নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, আমরা সে নির্বাচন মেনে নেব না। নির্বাচন নির্বাচন খেলা আর হবে না। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে আমাদের দাবি আদায় করব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে কী করবে, তা জনগণকে জানানো খুব জরুরি। শেখ হাসিনা সরকারের নিষ্পেষণ, নির্যাতন, দুর্নীতি- এসব এখন ঘরে ঘরে আলোচনা হয়। এর বিরুদ্ধে বিএনপি কী পদক্ষেপ নেবে তা জনগণকে জানাবে।

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠকের প্রস্তাবনাগুলো- দাবি, আন্দোলনের প্ল্যাটফরম, কূটনীতি, সাংগঠনিক অবস্থা এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে দলের মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রস্তাবনা তৈরি হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী যে কোনো বৈঠকে এই প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, এই সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ জন্য ছোটখাটো আন্দোলনে হবে না। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, এ ধরনের আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কেবল দলীয় কর্মীদের দিয়ে, দৃঢ় সমর্থকদের দিয়ে গণ-আন্দোলন হয় না। গণ-আন্দোলনে ব্যাকরণ অনুযায়ী আন্দোলনকে ধাপে ধাপে সম্প্রসারণ ও তীব্র করতে হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা দেখছি না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে আন্দোলন দরকার। পাশাপাশি সমঝোতাও দরকার। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। এই বিভাজনকে একটি সমঝোতায় আনতে হবে। এ জন্য সব দলের প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠকে বসতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com