সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পূর্বাহ্ন

আন্দোলন ছাড়া বিকল্প দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৮৯ বার

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর হতাশ ও ক্ষুব্ধ বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে সতর্ক কৌশলে এগোচ্ছে। আইনি পথে নানামুখী চেষ্টা চালিয়েও চেয়ারপারসনের মুক্তি নিশ্চিত না হওয়ায় এখন কেবল আন্দোলনের পথই বেছে নেয়াকে সঠিক বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে এ জন্য তারা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া কী বার্তা দিচ্ছেন, সেটিও দলের বিবেচনায় রয়েছে। জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের পথ বেছে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে আইনের পরবর্তী ফাঁকফোকর বের করার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে দলটি চলমান রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশ ও সরকারের ক্ষমতার মেয়াদকাল মাথায় রেখে করণীয় নির্ধারণের চিন্তা করছে।

অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া অন্তত মানবিক গ্রাউন্ডে জামিন পাবেন, এমন প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছিলেন সারা দেশে বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা; কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিবেদন না আসার কারণ দেখিয়ে শুনানির দিন পাল্টে ভিন্ন তারিখে জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় অনেকটাই হতাশায় মুষড়ে পড়েন তারা। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও এতে বিস্মিত ও হতাশ হন। গত ১২ ডিসেম্বর রায়ের দিন অনেক আইনজীবীকে কাঁদতেও দেখা গেছে।

যদিও বিএনপির একটি অংশ বরাবরই মনে করে আসছেন, আইনি উপায়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কখনোই সম্ভব নয়। তাদের বক্তব্য, বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দী হয়েছেন, সে ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া আইনি পথে তার মুক্তি হবে না। এদের কেউ কেউ বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার দিনই বিএনপিকে তুমুল আন্দোলনে নামা উচিত ছিল। সেই দিননির্দেশনা পেলে নেতাকর্মীরা স্ফুলিঙ্গের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাত। সরকারের টনকও নড়ত। তবে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জোর দিয়েই বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ীই বিএনপি সব পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে দলের আন্দোলন পরিকল্পনা নিয়ে কারো কারো মধ্যে হয়তো ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে গত ১২ ডিসেম্বরের পরে এ ব্যাপারে সবাই একমত, আইনি পথে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার আগে খালেদা জিয়া দলের নেতাদের যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, দল তার ব্যত্যয় করেনি। গত বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের শুনানিতে জামিনের বিষয়টি নাকচ হয়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়ার মনোভাবে পরিবর্তন আসতে পারে। দলীয় প্রধানের মনোভাবের এই পরিবর্তন দলকে কোন দিকে ধাবিত করবেÑ তা সময়ই বলে দেবে।

শুনানি নাকচের দিনই সন্ধ্যায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সর্বশেষ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের আগাগোড়াই ছিল দলীয় প্রধানের জামিন না হওয়ার প্রসঙ্গ। নেতারা মনে করছেন, সরকারের হস্তক্ষেপেই খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি। আপিল বিভাগে জামিন বাতিলের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বক্তব্যকে অনেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে সঙ্ঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’

এরই মধ্যে বেগম জিয়ার সাথে গত দুই দিন আগে দেখা করেছেন তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম। সাক্ষাৎ শেষে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে রিপোর্ট আদালতে দাখিল করেছে, তার সাথে বাস্ততার মিল নেই। তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি খেতে পারছেন না, বসতে পারছেন না। ডাক্তার ওষুধ দিচ্ছেন না, ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না। এখানে তিনি কিভাবে বাঁচবেন?’

বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, মেজো বোনের কাছে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির পরবর্তী করণীয় নিয়ে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। দল নিশ্চয়ই সেভাবে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব বিষয়ে বলেন, আমরা আশা করি না যে, আইনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। তাকে মুক্ত করতে হলে এই স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে। নেতাকর্মীরা কর্মসূচি চাচ্ছে। আমরা কৌশলে অগ্রসর হচ্ছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। আন্দোলনই মুক্তির একমাত্র পথ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com