সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

উন্নত মানুষ ও মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা

ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১
  • ১৩৭ বার

‘শিশুরা এই পৃথিবীতে আমাদের জন্য অলঙ্কারস্বরূপ’। (আল-কুরআন-১৮:৪৬) এই নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে শিশুদেরকে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী এবং সামাজিক ও জীবনঘনিষ্ঠ কাজে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা যেকোনো মুসলিম মা-বাবার জন্যই একটি বড় পরীক্ষা।

নিঃসন্দেহে প্যারেন্টিং একটি জীবনব্যাপী কর্ম, যা শুধু শারীরিক ও মানসিকভাবে গড়ে তোলার মাঝেই সীমাবদ্ধ না বরং এই জীবন ও মৃত্যুপরবর্তী জীবনের জন্য ধার্মিক গুণাবলি অর্জনও এর অংশ।

শিশুরা আমাদের জন্য দায়িত্ব
বিশ্বাসীদের জন্য শিশুরা একটি দায়িত্ব (আরবিতে ‘আমানাহ’)। সফল প্যারেন্টিংয়ের জন্য প্রয়োজন পূর্ণ প্রচেষ্টা, গঠনমূলক চিন্তাভাবনা, সীমাহীন ধৈর্য ও মাঝে মাঝেই অপরিসীম আত্মত্যাগ। আমাদের জীবন শুধু সামনের দিকে বয়ে চলে এবং কোনো সচেতন মা-বাবা তার দায়িত্বকে হালকাভাবে নিতে পারেন না। উত্তম প্যারেন্টিং ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান বিনিয়োগ, অপর দিকে দুর্বল প্যারেন্টিং পরিবার ও সমাজের জন্য বাজে ফলাফল নিয়ে আসে।

শিশু লালনপালন একটি প্রজন্মগত দায়িত্ব; একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সফল সমাজ বিনির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এর অনেক ভূমিকা রয়েছে। আদর্শ প্যারেন্টিংয়ের দ্বারা একটি বর্ধিত পরিবার একই সাথে শিশুকানন ও বিদ্যালয়ের ভূমিকা পালন করে, যাতে একটি ন্যায়নিষ্ঠ প্রজন্ম গড়ে ওঠে, যারা সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎমুখী চিন্তাচেতনার অধিকারী হবে।

প্যারেন্টিংয়ের ইসলামিক পদ্ধতি
পবিত্র কুরআন বিশ্বাসীদের বলছে, যেন তারা নিজেদের জীবনকে গুরুত্বসহকারে নেয়, নগণ্য হিসেবে না নেয়। ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করো, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।’ (সূরা আত তাহরিম-৬৬:৬
মুসলিম মা-বাবার কর্তব্য তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রদান করা যাতে তারা আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকেই শরিক না করে; আল্লাহ ও তাদের পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়; তাদের পিতা-মাতার অন্ধ অনুসরণ না করে, কিন্তু তাদের প্রতি নম্র আচরণ করে; এ বিষয় জেনে রাখে যে, আল্লাহ সরিষা দানার সমান বস্তুও বের করে আনতে সক্ষম (যদিও তা পাথরের মাঝে কিংবা আসমান অথবা ভূগর্ভে থাকে); নামাজ কায়েম করে, ভালো কাজের আদেশ দেয়, খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে এবং ধৈর্যধারণ করে; অহঙ্কারী আচরণ না করে; জমিনের বুকে ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে চলাফেরা না করে; সে ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে নিচু করে। (আল কুরআন-৩১ : ১৩-১৯)
নবী করিম সা: বলেছেন, ‘যখন একজন আদম সন্তান মারা যায়, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, শুধু তিনটি ব্যতীত; সদকায়ে জারিয়া; ইলম, যার দ্বারা অন্য মানুষ উপকৃত হয় এবং নেককার সন্তানের দোয়া।’ (সহিহ মুসলিম)

মুসলিম প্যারেন্টিংয়ের তিনটি পর্যায়-

মুসলিম প্যারেন্টিংয়ে তিনটি সপ্ত-বর্ষ পর্যায় প্রচলিত রয়েছে।

প্রথম পর্যায়
প্রথম সাত বছর পর্যায় হলো, শিশুকে ঘরের পরিবেশে সীমাহীন ভালোবাসা, আন্তরিকতা, যতœ ও নিরাপত্তা প্রদান করা, যেখানে একটি শিশু গঠনমূলক শারীরিক কার্যক্রম ও খেলাধুলার আনন্দের মাঝে বেড়ে ওঠে।
শিশুর মা-বাবা ও তার চার পাশের বড়রা এই আনন্দদায়ক বেড়ে ওঠার পরিবেশে অবদান রাখে। পুরুষ ও নারী একটি জোড়ায় আবদ্ধ (আল কুরআন ৭৮:৮) এবং মা-বাবার মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা শিশুর বেড়ে ওঠার বীজ বপন করে, যার প্রভাব শিশুর মাঝে পাওয়া যায়।

একটি নবজাতক শিশু তার মা-বাবা উভয়ের ভালোবাসায় সিক্ত হয় এবং বর্ধিত পরিবারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে। শিশুর স্বভাবগত ভালোবাসা পাওয়ার আকাক্সক্ষা তার মাঝে চিন্তার স্বাধীনতা জন্ম দেয়, তবে তার বয়স ও বিকাশ অনুযায়ী যথাযথ সীমার মাঝে।

একটি শিশু পৃথিবীতে আসে তীক্ষè মস্তিষ্ক ও কৌতূহলী মন নিয়ে, সে নিবিড় কৌতূহল নিয়ে চার পাশের সবকিছু সম্পর্কে জানতে চায়। মা-বাবার উচিত তার ওপর কোনো চাপ না দিয়ে বয়স উপযোগী শিক্ষা প্রদান করা, ভদ্রতা শেখানো এবং যথাযথ উৎসাহ দেয়া, যাতে সে তার চার পাশের পরিবেশ থেকে শিখতে পারে।

কিছু শিশু সহজে ছড়া শিখতে পারে, কেউ হয়তো একাধিক ভাষা শিখতে পারে এবং কেউ হয়তো কুরআন ও অন্য বই থেকে মুখস্থ করতে পারে।

দ্বিতীয় পর্যায়
দ্বিতীয় সাত-বছর পর্যায়ে সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও যথাযথ শৃঙ্খলার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে, যা হবে স্নেহ ও ভালোবাসা দ্বারা আবদ্ধ।

এই পর্যায়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তাদের সামাজিক ও জীবনঘনিষ্ঠ দক্ষতা শেখার দরকার হয়, একই সাথে প্রয়োজন হয় আত্মসম্মান গঠনের জন্য নিজেদের সম্পর্কে জানা; যেমন নিজেদের লিঙ্গ, ধর্ম, জাতীয়তা ও নিজের পরিচয় সংক্রান্ত আরো অনেক বিষয়।

ঘরের মাঝে কথাবার্তা বলতে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে তার মাঝে বুদ্ধিবৃত্তি জাগ্রত করা হয় এবং এর দ্বারা সে নিজ পরিবার, ধর্ম ও সমাজের সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সহজ গৃহস্থালি কাজকর্ম করার মাধ্যমে তার মাঝে আত্মবিশ্বাস, মা-বাবাকে সহায়তা করার আনন্দ ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

এটা যেহেতু বয়ঃসন্ধিকালের সময়, হরমোনগত, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন একটি সমস্যা অথবা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মা-বাবা, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাদারদের এই পরিবর্তনের সময়ের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে এবং কোমল তবে বলিষ্ঠভাবে এটিকে সামলে নিতে হবে। বড়দের এই সময়ে উপযুক্ত আচরণগত কৌশল সহানুভূতির সাথে অবলম্বন করা জরুরি।

তৃতীয় পর্যায়
তৃতীয়, সাত-বছর পর্যায় হলো শিশুর সাথে বন্ধুত্ব করার এবং পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে স্থায়ী সম্পর্ক সুদৃঢ় করার সময়।

এতদিনে শিশুরা তাদের কৈশোরের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে অথবা তা শেষ হয়ে গেছে। সে এখন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, নানাবিধ চিন্তা ও প্রাণশক্তিতে বিভোর। তাকে প্রজ্ঞার সাথে পরিচালনা করতে হবে, সম্মান দিতে হবে, ঠাট্টা অথবা অবজ্ঞা করা যাবে না।

বুদ্ধিমান মা-বাবারা কখনই ভুলেন না যে, তাদের সন্তানরা এই পৃথিবীতে এমন সময়ে এসেছে, যা তাদের নিজেদের শৈশবকাল থেকে ভিন্ন। সম্মানের ও পারস্পরিক নির্ভরশীল ভালোবাসার সম্পর্কের জন্য এই মানসিক বোঝাপড়া প্রয়োজন।

পারিবারিক মূল্যবোধ যেটা আধুনিক সময়ের সাথে মানানসই, স্বাস্থ্যকর খাবার ও অভ্যাস, সম্মানের সাথে নৈতিক ও ভারসাম্যপূর্ণ লাইফস্টাইল, ন্যায়পরায়ণতা এবং টেকনোলজি ও সোস্যাল মিডিয়ার যথাযথ ব্যবহার হলো সাফল্যের চাবিকাঠি।

বয়স অনুযায়ী শাসনের সঠিক পদ্ধতি
বয়স অনুযায়ী শাসনের বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেমন পুরস্কার বা সুযোগ বাড়ানো ও সুযোগ কমানো, শিশুর বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ে এগুলোর প্রয়োজন আছে। শিশুদের স্বাধীনতার দরকার আছে, কিন্তু তারা বেড়ে উঠলে তাদের সাফল্যের জন্য সৃজনশীল শৃঙ্খলাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিশুর জীবন পরিপূর্ণ হওয়া উচিত অপরিমিত স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে।

শৃঙ্খলার মাঝে বৈচিত্র্য আছে। এক দিকে এটি শুরু হয় মা-বাবা নিজেদেরকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার দ্বারা, অপর দিকে সন্তানের মন্দ আচরণ দূর করতে হয় কিছু শৃঙ্খলা পদ্ধতি দ্বারা। শিশুরা স্বভাবগতভাবেই ভুল করবে। মা-বাবার উচিত শিশুদের ‘শিশু’ হিসেবে গণ্য করা, বড় হিসেবে নয়। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, মা-বাবা শিশুর বয়স, মানসিক পরিপক্বতা ও স্বভাব অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

যেকোনো শাসনপদ্ধতি ব্যবহার করার আগে মা-বাবা ও বড়দের সমসাময়িক মূল্যবোধ, প্রথা ও রীতিনীতির কথা মাথায় রাখা উচিত। যথাযথ ও সময়মতো পারস্পরিক বোঝাপড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিরস্কার ও চিৎকার দ্বারা শিশুর আত্মসম্মানে ঘাটতি সৃষ্টি হয়।

‘ইতিবাচক প্যারেন্টিং’-এর ওপর গুরুত্বারোপ, বাসায় ভদ্র পরিবেশ এবং স্কুলে ‘দৃঢ় শৃঙ্খলা’ দ্বারা শিশু ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ববোধ অর্জন করে এবং বেড়ে ওঠার এই তিনটি পর্যায় সফলভাবে অতিক্রম করে।

শিক্ষাই চাবিকাঠি
শিক্ষা যেকোনো সমাজ অথবা জাতির টিকে থাকা ও সফলতার মূলভিত্তি, বিশেষ করে এই প্রতিযোগিতার যুগে। লোকদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা হলে জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তি আরো জাগ্রত হবে।

সভ্যতা বিনির্মাণে বই পড়ার অভ্যাস একটি মুখ্য ভূমিকা রাখে। ইসলাম আবির্ভাবের পর কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায় অগ্রগামী ছিল। পরে আত্মতুষ্টি ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে তারা ইউরোপ থেকে পিছিয়ে পড়ে।

মুসলিমদের জ্ঞান ও কর্মশক্তি পুনরুজ্জীবনের কেন্দ্রস্থল হওয়া উচিত গৃহ ও পরিবার। মা-বাবাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং নিজেদের বাসাকেই বাস্তব জীবনের স্কুল অথবা মাদরাসা হিসেবে তৈরি করতে হবে। নিজেদের প্যারেন্টিংয়ের সর্বপ্রধান কাজ হবে শিশুদের সুশিক্ষা প্রদান ও চরিত্র গঠন।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন, যা নির্দেশ করে মা-বাবা কতখানি লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে-
১। বাসায় কি বুকশেলফ আছে?
২। শিশুদের কি নিজেদের বুকশেলফ আছে?
৩। তাদের কি বিভিন্ন বিষয়ের যথেষ্ট বই আছে?
৪। মা-বাবা কি নিজেরা বই পড়েন?
৫। শিশুদেরকে কি বই পড়তে উৎসাহ দেয়া হয়?
৬। শিশুরা কি তাদের মা-বাবাকে বই পড়তে দেখে?
৭। মা-বাবা কি শিশুদের নিয়ে বই পড়েন এবং সেটি কি প্রায়ই?
৮। শিশুরা বইপড়া কতটা পছন্দ করে?
৯। মা-বাবা কি বই নিয়ে শিশুদের সাথে আলোচনা করেন?
১০। কত দিন পরপর মা-বাবা শিশুদের নিয়ে স্থানীয় লাইব্রেরিতে যান?
১১। মা-বাবা কি নিজ এলাকায় বইয়ের ক্লাব গঠন করতে পারেন?

উপসংহার
মুমিনরা বিশ্বাস করে, আল্লাহ সৃষ্টিজগতের অন্যান্য প্রাণিকুলের তুলনায় মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন জ্ঞানের কারণে। সর্বপ্রথম শব্দ, যা নবী মুহাম্মাদ সা:-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছিল তা হলো ‘ইকরা’ যার অর্থ ‘পড়’ অথবা ‘আবৃত্তি করো’।

নবী মুহাম্মাদ সা: বলেছেন, ‘জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ’ (আত তিরমিজি)। জ্ঞান এভাবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে স্থানান্তরিত হয় ইসলামিক চিন্তাধারার সাথে।

মা-বাবার উচিত ইতিবাচক প্যারেন্টিং দ্বারা শিশুর মাঝে জ্ঞানার্জনের আকাক্সক্ষা জাগ্রত করা। মুসলিমদের আদেশ করা হয়েছে যেন তারা পড়া, শেখা, পর্যবেক্ষণ, অনুধাবন ও কর্মের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে যেন তারা দুনিয়ার বুকে সত্যিকার আল্লাহর প্রতিনিধি হতে পারে। (আল কুরআন ২:৩০)। ঘর হলো প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে আদম সন্তান এই মর্যাদায় উন্নীত হতে পারে।
লেখক : ব্রিটিশ-বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও প্যারেন্টিং কনসালট্যান্ট। তার ‘মুসলিম প্যারেন্টিং’ গ্রন্থটি রকমারিতে পাওয়া যাবে।
https://www.rokomari.com/book/220695/muslim-parenting

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com