জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নবগঠিত কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। শনিবার বিএনপির এই অঙ্গ সংগঠনের কমিটি ঘোষণা করা হয়। অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে দাবি করে তা বিলুপ্ত চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতাদের একটি গ্রুপ। এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে তারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। সংগঠনটির আরেকটি গ্রুপ নতুন কমিটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের পথ খুঁজছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও।
জাসাসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, নতুন কমিটির আহ্বায়ক আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার নিষ্ক্রিয়তার কারণে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়াও বছরের ১১ মাসই তিনি আমেরিকায় অবস্থান করেন। আর সদস্য সচিব যাকে করা হয়েছে, তার অতীত জীবনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রয়েছে বলে জানা নেই। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি করা হয়েছে, সেখানে নিষ্ক্রিয় নেতারা অধিকাংশ পদ পেয়েছেন। বাদ দেওয়া হয়েছে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে।
শনিবার চিত্রনায়ক হেলাল খানকে আহ্বায়ক ও জাকির হোসেন রোকনকে সদস্য সচিব করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর জাসাসের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান। বিলুপ্তির দেড় মাসেরও বেশি সময় সংগঠনটির কোনো কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বিক্ষুব্ধ নেতাদের পক্ষে কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার জাকির হোসেন আখের। বৃহস্পতিবার দুপুরে চিঠিটি বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দপ্তরের মাধ্যমে হাইকমান্ডের কাছে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, একুশে পদকপ্রাপ্ত ছড়াকার আবুল সালেহ, দলীয় (বিএনপি) সংগীতের গীতিকার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মনিরুজ্জামান মনির, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার মুন্সি ওয়াদুদ, নাট্যকার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাবুল আহমেদ, মহানগরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ইমতিয়াজ আহাম্মেদ চপল, মো. সালাউদ্দিন মোল্লাসহ অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিককে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঘোষিত কমিটিতে অনেককেই যোগ্যতা অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়নি। যে কারণে কণ্ঠশিল্পী, অভিনেতা, নাট্যকার ও সংগঠকরা নতুন কমিটির সঙ্গে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
চিঠিতে বিক্ষুব্ধ নেতারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন, প্রয়োজন মনে করলে নিরপেক্ষ একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য অথবা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিশিষ্টজনের সমন্বয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে তাদের মাধ্যমে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিতে পারেন। যারা আগামী ছয় মাসের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে একটি ভিডিও কনফারেন্স করতে চান বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তারা। একই সঙ্গে এই বিরূপ পরিবেশেও দীর্ঘকাল এই সংগঠনের সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদের কথা শোনার পর অভিভাবক হিসাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মাথা পেতে নেবেন বলেও চিঠিতে জানান বিক্ষুব্ধ নেতারা। এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলকেও চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে রাজধানীর উত্তরার বাসায় দেখা করেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। তারা নতুন কমিটি বিলুপ্ত করার দাবি জানান। এ নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আকরাম টাওয়ারে বৈঠকও করেন। এতে নতুন আহ্বায়ক কমিটির অন্তত ১১ জনসহ অর্ধশত নেতা অংশ নেন। জাসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা বাবুল আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এমএ মালেকও ছিলেন। জাসাসের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিবা শানু বলেন, যারা জয় বাংলা লেখেন, তারা এখন কমিটিতে। আর প্রথম বাংলাদেশ যারা লিখেছেন, তারা এখন কমিটিতে নেই। জাসাসের সাবেক সভাপতি এমএ মালেক বলেন, জাসাসের এই কমিটি দিয়ে দুর্নীতিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
বাবুল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ব্যর্থতার দায়ে আগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ তাদেরকে দিয়েই আবার কী কারণে কমিটি দিলেন জানি না। যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে, তিনি তো দেশেই থাকেন না। আর সদস্য সচিবকে কেউ চেনেন না। জাসাসকে ধ্বংস কারার চক্রান্তে একটি চক্র এ কাজটি করেছে? শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে উদ্দেশ্য নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন একটা সাংস্কৃতিক দলকে সংযুক্ত করেছিলেন, সেই উদ্দেশ্যটাই এরা কেউ জানেন না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক হেলাল খান যুগান্তরকে বলেন, বছরের ১১ মাস আমেরিকায় থাকি-এ কথা সত্য নয়। আমার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য আমেরিকায় থাকেন। করোনাভাইরাসে পরিবারের চারজন লোক মারা গেছেন। সেজন্য লম্বা সময় আমেরিকায় ছিলাম। ৩০ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছি।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দূরদর্শী চিন্তা করেই জাসাসের কমিটি দিয়েছেন। যাদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে, সবাই যোগ্য এবং সংগঠন করার মতো। কিছু লোক কখনো খুশি হবেন না-এটাই স্বাভাবিক। তাদের দাবির বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সমাধান দেবেন।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল যুগান্তরকে বলেন, দল যখন একটা সিদ্ধান্ত দেয়, সেটাকে ধরে নিয়েই সামনে চলতে হবে। এরপরও যদি কোনো রকমের বিপরীতমুখী কারও কোনো প্রতিক্রিয়া থাকে, সেটাও শুনতে তো আমাদের অসুবিধা নেই। তারা বাইরের কেউ নন, সবাই জাতীয়তাবাদী শক্তি, বিএনপিরই লোকজন। এটা (কমিটি গঠন) সঠিক হয়নি বলে যারা মনে করছেন, তাদের দাবির বিষয়ে আমরা দলের নীতিনির্ধারকদের জানাব। এটা তো সমাধানযোগ্য বিষয়।