পাকিস্তান সিরিজের উইকেট বেশ ভালো। বল ব্যাটে আসছে। টস ভাগ্যও বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে। তার পরও দেশের মাটিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেন নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না?
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মন্থর ও টার্নিং উইকেট বানিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড দলকে পরাস্ত করেছিল বাংলাদেশ। তবে সিরিজ জিতলেও টাইগারদের ব্যাটিং মনমতো হয়নি। টি-টোয়েন্টি যে রানের খেলা। দর্শকরা চার-ছক্কায় মাততে চান। সিরিজ জিতলেও তাই মিরপুরের পিচ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এবার পাকিস্তান সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের উইকেট খারাপ না। তবে ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন না। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ প্রথমে টস জিতে ব্যাট করেছে। তবে কোনো ম্যাচেই দলীয় সংগ্রহ সন্তোষজনক ছিল না। প্রথম ম্যাচে ১২৭ ও দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা তুলতে পারেন ১০৮ রান। ব্যাটসম্যানদের মলিন পারফরম্যান্সের জন্য মিরপুরের পিচকে দায়ী করার সুযোগ কম; বরং এর জন্য কাঠগড়ায় তোলা যেতে পারে ব্যাটসম্যানদের। তাদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ের কারণেই দলীয় সংগ্রহ বড় হচ্ছে না। ম্যাচে পাকিস্তানের বোলাররা যতটা না ভালো বোলিং করছেন তার চেয়ে বেশি খারাপ ব্যাটিং করে উইকেট ‘উপহার’ দিচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ম্যাচে রীতিমতো বাজে শট খেলে আউট হয়েছেন আফিফ, মাহমুদউল্লাহ ও মাহেদী। পাকিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হেরে সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হারার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, ‘আমি মনে করি আমরা আজ বেশ ভালো শুরু করেছিলাম। আফিফ ও শান্ত দারুণ ব্যাট করেছে। আমি ও শান্ত একটা জুটি গড়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু সেটা হয়নি। আমি মনে করি আমাদের মতো দলের জন্য একজন সেট ব্যাটসম্যান প্রয়োজন যে শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকবে। কিন্তু সেটা আজ হয়নি।’
প্রথম ম্যাচের ফিল্ডিং ভালো ছিল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ফখর জামান ও রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন সাইফ হাসান ও তাসকিন আহমেদ। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘ছেলেরা ক্যাচ ধরার অনুশীলন করছে নিয়মিত। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচের সময় আমরা সুযোগগুলো হাতছাড়া করছি।’ তবে বোলারদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি গত ৫-৬ মাসে আমাদের বোলিং দুর্দান্ত হচ্ছে। পেস ও স্পিন দুই বিভাগেই। এখন ব্যাটিং বিভাগের সেরাটা দিতে হবে।’
পাকিস্তান সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই দলীয় সংগ্রহটা ১৫০ হতে পারত! আর এমনটা হলে ম্যাচের ফলও অন্যরকম হতো। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে তা হয়নি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ^াসে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ব্যাটিংয়ের সময় তাড়াহুড়ো করার কারণে ইনিংসকে বড় করতে পারছেন না। আর বাজে শট খেলে আউট হওয়ার ঘটনাও কম নেই! দ্বিতীয় ম্যাচে সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘অবশ্যই ঘরের মাঠে সর্বশেষ দুটো সিরিজে (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড) আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তার পর এসে দুটি ম্যাচ খারাপ হয়েছে। ভালো, খারাপ হতে পারে কিন্তু আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ আমরা যেভাবে ব্যাটিং করছি সেই জিনিসটা আমাদের ভালো হচ্ছে না। আমরা ব্যাটসম্যানরা যদি আরও একটু ভালো ব্যাট করতে পারি তা হলে হয়তোবা আরও একটু প্রতিযোগিতামূলক খেলা হতে পারত।’
টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ব্যাটসম্যানরা মলিন ছিলেন। বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ড ও সুপার টুয়েলভে টানা ৫ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভে তো শ্রীলংকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে গেছে। এবার দেশের মাটিতে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতার কারণে পাকিস্তান সিরিজও হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন শেষ ম্যাচটা হারলে পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেতে হবে। শেষ ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা জ্বলে উঠতে পারবেন তো?