জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের নতুন কমিটির শপথ গ্রহণ
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)-এর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি ও বোর্ড অব ট্রাস্ট্রির কর্মকর্তাগণ শপথ গ্রহণ করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর, রোববার প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় শপথ গ্রহণ। উভয় কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান জেএমসির ট্রাস্টি বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাফফর। ২০২২-২০২৩ সালের জন্য নির্বাচিত কমিটির কর্মকর্তাগণ আগামী ১ জানুয়ারী থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। এর আগে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের নতুন কাযনির্বাহী কমিটি ও ট্রাস্টি বোর্ড রেকর্ড সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে গত ১৪ নভেম্বর বিশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়। উল্লেখ্য, জেএমসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট ডেন্টিস্ট ডা. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান পুনরায় প্রেসিডেন্ট এবং জেএমসির সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি আফতাব মান্নান সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন। অপরদিকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিশিষ্ট ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ জায়েদুর রহমান এবং ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নাজমুল এইচ খান।
জেএমসি’র বিদায়ী সেক্রেটারী মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাফফর। এছাড়া মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন জেএমসি প্রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ ও কোষাধ্যক্ষ বাবুল মজুমদার। সভার প্রারম্ভে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং বিশেষ দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। তিনি জেএমসি’র মর্যাদা ও সুনাম বজায় রাখার জন্য সকল সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান। প্রেসিডেন্ট ডা. সিদ্দিকুর রহমান ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাফফর স্বাগত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির বিগত দু’বছরের কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করেন।
বার্ষিক সাধারণ সভার রীতি অনুযায়ী মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী সেক্রেটারীর রিপোর্ট পেশ করেন। হাউজে তার রিপোর্টের উপর আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে তা পাশ করা হয়। কোষাধ্যক্ষ বাবুল মজুমদার বিগত দুই আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেন। কোষাধ্যক্ষের রিপোর্টের উপর আলোচনায় অংশ নেন বেশ কয়েকজন সদস্য। তার প্রদত্ত রিপোর্টও পাশ হয় সাধারণ সদস্যদের সমর্থনে। স্বাগত বক্তব্যে জেএমসির প্রেসিডেন্ট ডা. সিদ্দিকুর রহমান তাদের সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে মার্জনার আহ্বান জানান। তিনি মূল প্রতিষ্ঠান জেএমসি ও আল মামুর স্কুলের সাহায্যে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন সবাইকে।
এদিকে গত ১৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদিত কমিটির বিরোধিতা করে যারা বাছাই কমিটির নিকট সদস্যদের স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন পত্র জমা দেন তা ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাছাই কমিটি। শুধু তাই নয় তাতে অনেকের স্বাক্ষর জাল প্রমাণিত হওয়ায় চূড়ান্ত যাচাই শেষে বাছাই কমিটি তা প্রত্যাখান করেছে বলে জানান ডা. সিদ্দিক। এসময় সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যবৃন্দ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। সাধারণ সভায় সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কর্মকর্তাগণ। জেএমসির বর্তমান গঠনতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে জরুরী ভিত্তিতে এর কতিপয় ধারা সংশোধনীর প্রস্তাব দেন বেশ ক’জন সদস্য। নূতন কমিটি দায়িত্বভার গ্রহণের পর বিষয়গুলো আমলে নেয়ার আহ্বান জানান তারা।
জেএমসি’র কার্যনির্বাহী কমিটির নব নির্বাচিত কর্মকর্তাগণ হলেন: প্রেসিডেন্ট- ডা. সিদ্দিকুর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট- মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, সেক্রেটারী- আফতাব মান্নান, জয়েন্ট সেক্রেটারী- ফখরুল ইসলাম দেলওয়ার, কোষাধ্যক্ষ- মোহাম্মদ বাবুল মজুমদার, সহকারী কোষাধ্যক্ষ- মুয়াহিদ বিল্লাহ সিপিএ। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যঃ মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন, ইমাদ সিদ্দিক, সাঈদ রহমান লাবু, আজহার হক, ডা. ইমরান হোসেইন, আতাউর রহমান ও শাহাদাত হাসান।
বোর্ড অব ট্রাস্টির কর্মকর্তা হলেন: চেয়ারম্যান- বিশিষ্ট ফার্মাসিস্ট মোহাম্মদ জায়েদুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান- ডা. নাজমুল এইচ খান। সদস্য যথাক্রমে ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান তুহিন, ফার্মাসিস্ট মুহাম্মদ আসাবুর সাবু, ফার্মাসিস্ট নুরুল হক ও ডা. জুন্নুন চৌধুরী, রফিউদ্দিন মঞ্জু। পদাধিকার বলে সাবেক জেএমসি প্রেসিডেন্ট এবং এক্স অফিসিয়াল বোর্ড অব ট্রাষ্টির সদস্য।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটি কর্তৃক পরিচালিত সর্ববৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)। প্রতি দু’বছর অন্তর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। জেএমসির গঠনতন্ত্রের ৬ষ্ঠ ধারা ও ৬.৫ উপধারা অনুযায়ী নূতন কর্মকর্তাদের মনোনীত করার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করে বর্তমানে দায়িত্বরত বোর্ড অব ট্রাস্টি ও কার্যনির্বাহী কমিটি। অতীতের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের নির্বাচনও সেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালনাধীন আল মামুর স্কুল ছাড়াও রয়েছে হাফিজী মাদ্রাসা ও ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য নিয়মিত উইক এন্ড স্কুল। নূতন প্রজন্মের মাঝে ইসলামী শিক্ষার ধারা ও সংস্কৃতি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জেএমসি।