কয়েক মাস আগেও খুলনায় তেরখাদা ও রূপসা উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের জন্য আঠারোবাঁকি নদীর ওপর কোনো সেতু ছিল না। জরুরি প্রয়োজনে নৌকাও পেত না উপজেলাবাসী। পাশাপাশি ছিল টোল।
তবে এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী দুই উপজেলার মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে টোল ফ্রি করে দেন। পরবর্তীতে এলাকার মানুষের সুবিধার্থে আঠারোবাঁকি নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসে। কিন্তু অল্প সময়ের প্রস্তুতিতে সেতু নির্মাণ অসম্ভব হওয়ায় তিনি প্লাস্টিকের ড্রামের সেতু নির্মাণ করার বিষয়ে আশ্বাস দেন।
যার ফলশ্রুতিতে সাংসদের নিজস্ব তহবিল এবং দুই উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আঠারোবাঁকি নদীর ওপর প্রথম ভ্রাম্যমাণ ড্রামের সেতু নির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে এটি চালু করা হয়।
আঠারোবাঁকি নদীর ওপর নির্মিত এই সেতুতে সুবিধা পাচ্ছে খুলনা জেলার দুটি উপজেলার হাজারো মানুষ। সম্পূর্ণ টোল ফ্রিতে এতে যাতায়াত করছে জেলার রূপসা ও তেরখাদা উপজেলাবাসী। যার ফলে দৈনন্দিন কাজে সাধারণ মানুষের নৌকা পারাপারের ঝামেলা কমেছে।
শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে আঠারোবাঁকি নদীর ওপর অবস্থিত খুলনার একমাত্র এবং প্রথম ড্রামের সেতু। এর পশ্চিম পাশে তেরখাদা উপজেলার আজগড়া ইউনিয়নের শেখপুরা বাজার এবং পূর্বপাশে রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের শিয়ালী বাজার। ড্রামের সেতুকে কেন্দ্র করে এলাকার চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। এ ড্রাম সেতুটি এখন খুলনার আশপাশের মানুষের দর্শনীয় স্থান হিসেবেও রূপ নিয়েছে। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন বিকালেই ড্রামের তৈরি সেতু দেখতে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা।
সেতুকে কেন্দ্র করে অনেক ইজিবাইক চালক আত্মকর্মসংস্থানে নেমেছে। জরুরি রোগী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ দিন মজুররা ড্রামের সেতুর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা নিচ্ছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গেল সংসদ নির্বাচন চলাকালীন সময়ে আঠারবাঁকি নদীতে নৌকা চলাচল করত। নৌকার স্বল্পতা ও জরুরি প্রয়োজনে নৌকা মিলত না। পাশাপাশি ছিল টোল। বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী দুই উপজেলার মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে টোল ফ্রি করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে নির্বাচনের পর দুই এলাকার মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সেতু নির্মাণের বিষয়টি সামনে আসে।
রূপসা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বাদশা জানান, এই ভ্রাম্যমাণ ড্রাম সেতুর কারণে দুই উপজেলার মানুষ রাত-দিন বিনা টোলে নদী পার হতে পারছে। সাংসদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্লাস্টিকের ড্রাম, কাঠ ও বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় সেতুটি।
তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যের নির্দেশে তেরখাদা ও রূপসা উপজেলার চেয়ারম্যানের তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে করে রূপসা, তেরখাদা এবং ফকিরহাটের মানুষ উপকৃত হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থী, খেটে খাওয়া দিন মজুরির মানুষগুলোর নানাভাবে উপকার হচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘দুই উপজেলার হাজারো মানুষের উপকারের কথা চিন্তা করে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভ্রাম্যমাণ ড্রামের সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করেছি। বিনা টোলেই সেতুর উপকার পাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।’
তিনি আরো বলেন, এরই মধ্যে এই নদীর ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণ করার জন্য এলজিইডিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ‘ভবিষ্যতে এখানে সেতু নির্মাণ করার জন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব,’ বলেন তিনি। ইউএনবি