আগামী দুই দিন বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। আগামীকাল সোমবার থেকে ধীরে ধীরে সার্বিক তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে বয়ে আসা বাতাসের গতিও কিছুটা কমে এসেছে। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের দিক থেকে যে ঠাণ্ডা প্রবাহ বাংলাদেশের দিকে আসছিল তার গতিও কিছুটা কমেছে। তা সত্ত্বেও আজ রোববার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলো এবং চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। শীতজনিত কারণে গতকাল শনিবার সারা দেশে চার হাজার ১৯৬ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক হাজার ৬৩৯ জন। শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে গতকাল অসুস্থ হয়েছে ৬৬৮ জন।
গতকাল দেশের কোথাও উল্লেখ করার মতো তেমন বৃষ্টি হয়নি। আকাশও দিনের একটি সময় বেশ পরিষ্কার ছিল। দুপুরের দিকে রোদের তেজও ছিল মোটামুটি। এসব কারণে আগের দিনের চেয়ে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অনেকটা ওপরের দিকেই ছিল।
আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, দিনে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও সূর্যকিরণ বেশি পাওয়া যায়। আবার দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান কম থাকলেও শীতের অনুভূতি বেশি বাড়ে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাজধানীতে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র ৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। গত শুক্রবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ কারণে সেদিন বেশ শীত অনুভূত হয়। তিনি বলেন, শীতকালে রাতের ভাগ বড় এবং দিনের ভাগ ছোট। এ কারণে দিনে যে তাপ পাওয়া যায় রাত বড় বলে তা খুব দ্রুত কমে গিয়ে শীত বাড়িয়ে দেয়। আবার দেখতে হবে উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের অবস্থান কোথায়। এটা পশ্চিম সংলগ্ন বাংলাদেশের কাছাকাছি থাকলে বাংলাদেশে তাপমাত্রা কমে যায়। কারণ এ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ঠাণ্ডা।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়ার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ছিল ২০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, তীব্র শীতে নুড়িপাথর সংগ্রহের জন্য তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীতে নামতে না পারায় পাথরশ্রমিকদের দুর্দিন চলছে। গতকাল শনিবার সকালে ডাকবাংলো ঘাটে দেখা যায়, মহানন্দার হিমশীতল পানিতে ঠাণ্ডায় পাথরশ্রমিকরা কাজে নামেনি। পাড়ে অপেক্ষমাণ শ্রমিক সাইফুল, সাদ্দাম ও মনছুর এ প্রতিবেদককে জানান সপ্তাহ ধরে কনকনে হাঁড় কাঁপানো শীত অব্যাহত থাকায় নুড়িপাথর সংগ্রহে নামতে পারছি না। তবে সূর্যের আলো দেখা মিললে নদীতে ঠাণ্ডার মধ্যেও কিছু সময় পাথর সংগ্রহ করি। নইলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে খাব। ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে বরফ শীতল পানিতে নামার কারণে হাত-পায়ের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
হিমালয় কন্যা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড় জেলা। এই জেলার সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে হিমালয় পর্বতের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। ঘন কুয়াশায় সারাদিন তেঁতুলিয়া-পঞ্চগড় মহাসড়কে এবং বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের মালবাহী সব ধরনের যানবাহনে ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। আকাশে সূর্যের দেখা মিলেনি। হঠাৎ করে শীতের প্রকৌপ বৃদ্ধিতে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিস সূত্রে জানা যায় দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যে কারণে সপ্তাহ ধরে তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া সাড়ে ৫ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
তালা (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা জানান, কনকনে শীতে তালা উপজেলার মাদরা গ্রামে গোবিন্দ মণ্ডল (৭৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছে। জানা যায়, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে মাদরা বাজারে এসে চা নাস্তা খেয়ে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যান। কিছুক্ষণ পর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় দোকানের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তাকে দ্রুত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।