স্বাগতম ২০২০। পূর্বাকাশে উঁকি দিল ভোরের সূর্য। চারদিকে আলোর ঝরনাধারা ছড়িয়ে পড়ল একটু একটু করে। সরব কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকা প্রকৃতিও। আজকের সূর্য, নতুন ভোর নিয়ে এলো নতুনের বার্তা। ২০২০ সালের প্রথম সূর্যোদয় এটি। বুধবার সকালটি খ্রিস্টীয় নতুন বছরের সূর্যোদয় হলেও গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাঁটা শূন্যের ঘর ছুঁতেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। নতুন বছর মানেই নতুন উদ্দীপনা আর প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে চলা। পেছনে ফেলে আসা ২০১৯ সালের ভুল, হতাশা, দুঃখ, গ্লানিকে দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন উদ্যমে সাহস নিয়ে শুরু হলো নতুন পথচলা।
থার্টিফার্স্ট নাইট মানেই আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠা। এবারও ইংরেজি নববর্ষ-২০২০ উদ্যাপন নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। তার পরও আনন্দের বাঁধ ধরে রাখা যায়নি। ঘড়িতে রাত ১২টা বাজতেই বর্ণিল আতশবাজির মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ঢাকাবাসী। আতশবাজি ফুটিয়ে ও ফানুস উড়িয়ে বর্ষবরণ উৎসবে মেতে ওঠে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা।
একই চিত্র রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোরও। নতুন বছরের প্রথম প্রহরে রাজধানীতে উল্লাসে ফেটে পড়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরাও। ঢাকায় থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আগেই ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সতর্ক অবস্থায় ছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও।
এ রাতকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার নগরজুড়ে জোরদার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনের পাশাপাশি হোটেল, ক্লাব ও বিনোদনকেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চলতে দেখা গেছে গভীর রাত পর্যন্ত। এ ছাড়া টহলে ছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরাও। ফলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই পালিত হয় থার্টিফার্স্ট নাইট।
র্যাব-পুলিশের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকা- ঠেকাতে পোশাকধারী সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা ছিল থার্টিফার্স্ট নাইটে। স্ট্যান্ডবাই রাখা ছিল র্যাব-পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও ডগ স্কোয়াডও। বাড়তি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল এবং পাঁচতারকা হোটেলে। নিরাপত্তার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ছিল তল্লাশি চৌকি। সন্দেহভাজনদের করা হয় তল্লাশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কূটনৈতিক জোন গুলশানে প্রবেশে সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ ছিল। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে বন্ধ রাখা হয় হাতিরঝিল। রাজধানীর উন্মুক্ত কোনো স্থানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা থেকে বন্ধ রাখা হয় রাজধানীর সবগুলো বার। তবে পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে বিদেশিদের জন্য বার খোলা ছিল।
অ্যালকোহলিকদের টেস্টের জন্য কিটসহ রাস্তায় সতর্ক অবস্থায় ছিল পুলিশের বিশেষ টিম। আতশবাজি, পটকাবাজি, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল আগে থেকেই। ফলে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে রাজধানীতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর বহিরাগত কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই রাত ৮টার মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় চলে আসেন। তাই এবারের থার্টিফার্স্ট নাইট ছিল শুধুই আনন্দের। তবে পথে পথে এই তল্লাশিকে নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি বলে মনে করছেন অনেকেই। তারা বলছেন, সারাবিশ্ব এ দিনটিকে নানা আনন্দ আয়োজনে উদযাপন করছে, কিন্তু বাংলাদেশে রয়েছে আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা। এটা সংস্কৃতির বিকাশের অন্তরায়।
মঙ্গলবার রাতে টিএসসি এলাকা পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় নগরবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন আনন্দ-উৎসবে অংশগ্রহণ করবে। তবে উৎসব উদযাপনের নামে বিশৃঙ্খল কিছু করা যাবে না। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগরবাসী যেন দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উৎসব উদ্যাপন করতে পারে, সে জন্যই জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আশপাশে আছে ডিএমপি। রাজধানীবাসীকে আতশবাজি, পটকাবাজি, বেপরোয়া গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালনাসহ যে কোনো ধরনের অশোভন আচরণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। বিরত থাকতে বলেছেন, উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ও সমবেত হওয়া থেকেও।