বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২০
  • ৩০৩ বার

নানা রকম সঙ্কটে পড়ে ব্যবসা ছাড়ছেন নিটিং শিল্প মালিকরা। প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে কারখানা। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, মজুরি কম, গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নির্ধারিত সময়ে বকেয়া টাকা তুলতে না পারাসহ অনেক রকম সমস্যায় পড়েছেন দেশের সহস্রাধিক নিটিং কারখানার মালিক। সঙ্কটের কারণে এ শিল্পে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি মাসে তারা লোকসান দিচ্ছেন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ৬ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধশত কারখানা। বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও পোশাক কারখানার মালিকরা কাপড় বুননের দাম বৃদ্ধি না করায় ক্ষুব্ধ নিটিং শিল্পের মালিকরা।

বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, দেশের এক হাজারের বেশি নিটিং কারখানায় প্রতিদিন ৩০ লাখ কেজি কাপড় উৎপাদন হয়। তাদের বোনা কাপড় ব্যবহার করছে রফতানিমুখী পোশাক কারখানাগুলো।

জানা গেছে, নিটিং শিল্পে ৪০ কাঠচন্দের সুতা নিটিং করে ফেব্রিক বানানো হয়। সিঙ্গেল জার্সি, স্লাব, ভিসকস সিঙ্গেল জার্সি, পিকে/লেকোস্ট, হেভি জার্সি, লোকড়া, ফ্লিস, টেরি ফ্লিস, রিব, ইন্টালক, প্লেন কলার, টিপিং কলার, রেইজিং কলার, কাফ ইত্যাদি ডিজাইনের নামে সুতা থেকে ফেব্রিকস বুনন করা হয় নিটিং মেশিনে।

সঙ্কটের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম সারোয়ার গতকাল মঙ্গলবার নয়া দিগন্তকে জানান, চরম সঙ্কটে যাচ্ছে নিটিং শিল্প। প্রতিদিনই কারখানা বন্ধ হচ্ছে। প্রতি মাসে এ শিল্পের সাথে জড়িতরা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছেন। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

তিনি অভিযোগ করেন, নিটিং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঐক্য নেই। অনেকে গোপনে কম মজুরিতে কাজের অর্ডার নিচ্ছেন। এতে ফায়দা লুটছেন গার্মেন্ট মালিকরা। তাই নিটিং শিল্প মালিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। নিটিং ব্যবসায়ীদের মন্দা কাটিয়ে উঠতে নিটিং মূল্য বাস্তবায়নে ৭৮ সদস্য উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। চেষ্টা করছি দ্রুত ৩ থেকে ৪ টাকা মজুরি বাড়িয়ে এ সমস্যা সমাধান করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে।

নিজের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে প্রাইড টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান শ্যামল কুমার জানান, পোশাক কারখানার মালিকরা নিটিং মালিকদের মূল্যায়ন করেন না। তারা ডাইং কারখানায় অগ্রিম টাকা দিয়ে কাজ করান, কিন্তু নিটিং কারখানার মালিকদের কাজ শেষেও তারা টাকা পরিশোধ করেন না। নানাভাবে চাপ সৃষ্টি এবং কাজ না দেয়ার হুমকি দিয়ে সংগঠনের নির্ধারিত মূল্যের তালিকার কম দামে কাজ করান।

চেঙ্গিস নিটওয়্যার লিমিটেডের এমডি ইব্রাহিম চেঙ্গিস বলেন, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। প্রয়োজনে আমরা সবাই মিলে মূল্যবৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে যাবো।

সাবেক সভাপতি আবু তাহের শামীম বলেন, ২০১২ সালে বুনন মূল্য বাড়ানোর দাবিতে আধা বেলা ধর্মঘটের পর সামান্য মূল্য বৃদ্ধি হয়েছিল।

উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কথা তুলে এ সংগঠনের সহসভাপতি রাকিবুল হাসান জানান, আগে শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হতো পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা, এখন শ্রমিকদের মজুরি দিতে হয় ১১ থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। শ্রমিকদের মজুরি, বিদ্যুৎ বিল, কারখানা ভাড়াসহ সব জিনিসের খরচ বাড়লেও তাদের উপার্জন বাড়েনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। অনেক কারখানায় মেশিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের প্রাপ্য আদায় করতে হবে।

দেশের প্রধান রফতানি পণ্য নিট পোশাকের বেশির ভাগ কারখানা নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। বিশেষত নিটিং হিসেবে পরিচিত সুতা থেকে থানকাপড় বা ফেব্রিক তৈরির কাজটি এখন করছে দেশের এক হাজারের বেশি কারখানা। চাহিদা বাড়ায় দুই দশক ধরে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে বিকশিত হয়ে এই নিটিং শিল্পে এখন বিনিয়োগের পরিমাণ অন্তত দুই হাজার কোটি টাকা। প্রধানত নারায়ণগঞ্জেই গড়ে উঠেছে এই শিল্প। আর কিছু আছে গাজীপুরে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com