সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

মাথাব্যথা হলেই মাইগ্রেন নয়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২
  • ১৯১ বার

সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সে মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা শুরু হয়। যে কোনো পেশার মানুষেরই মাইগ্রেন হতে পারে। বাংলায় বলে আধকপালি। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগে। ২৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে এর ব্যাপ্তি বেশি হয়। তবে সব মাথাব্যথাই মাইগ্রেন নয়। দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, মাইগ্রেন একধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। চিকিৎসকের অধীনে এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা উচিত। মাইগ্রেনের ব্যথা চোখের কোনো সমস্যার জন্য হয় না।

মাইগ্রেন কী : মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যে কোনো একপাশ থেকে শুরু হয়ে তা বিস্তৃত হতে থাকে। মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়। এ ছাড়া মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে বমি এবং বমি বমিভাব রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে।

যাদের বেশি হয় : মাইগ্রেন কেন হয়, তা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীর বেশি হয়। পুরুষ ও নারীর এ অনুপাত ১:৫। নারীদের পিরিয়ডের সময় এ রোগ বেশি দেখা দেয়। চকোলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া বা পান করা, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণেও এ রোগ হতে পারে। এ ছাড়া মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিউজ্জ্বল আলো এ রোগকে ত্বরান্বিত করে।

মাইগ্রেনের প্রাথমিক লক্ষণ : মাথাব্যথা, বমি ভাব এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তবে অতিরিক্ত হাই তোলা, কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তি বোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যে কোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা এড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করা ও ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

ক্ল্যাসিক্যাল মাইগ্রেনের লক্ষণ : এতে দৃষ্টিসমস্যা, যেমন- চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিসীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যে কোনো একপাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। ২০ মিনিট স্থায়ী এসব উপসর্গের পর বমির ভাব এবং মাথাব্যথা শুরু হয়, যা সাধারণত একপাশে হয়। দৃষ্টির সমস্যা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়।

রেহাই পাওয়ার উপায় : মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। যেমন- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং তা হতে হবে পরিমিত। অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা। কড়া রোদ বা তীব্র ঠাণ্ডা পরিহার করতে হবে। উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা। বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা। মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠাণ্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে বাখা উচিত।

যেসব খাবার মাইগ্রেন প্রতিরোধে সহায়ক : ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন- ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক। বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে। সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা, বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। আদার টুকরা, আদার রস বা জিঞ্জার পাউডার দিনে দুবার পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন : চা, কফি ও কোমল পানীয়। চকোলেট, আইসক্রিম, দই। ডেইরি প্রোডাক্ট (দুধ, মাখন)। টমেটো ও সাইট্রাস জাতীয় ফল। গমজাতীয় খাবার, যেমন- রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি। আপেল, কলা ও চীনাবাদাম। অতিরিক্ত পেঁয়াজ। তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয়, একটা ডায়েরি রাখা, যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

লেখক : অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com