যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পুলিশের (এনওয়াইপিডির) গোয়েন্দা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি পেলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুরঞ্জিত কান্তি দে। গত ২৭ মে প্রায় দুই শতাধিক পদোন্নতি প্রাপ্তদের মধ্যে ডিটেকটিভ ৩য় গ্রেডে পদোন্নতি পান চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার এই কৃতি সন্তান।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কের কুইন্সে অবস্থিত পুলিশ একাডেমিতে জমকালো এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার হাতে পদোন্নতির সনদ তুলে দেন এনওয়াইপিডির বর্তমান পুলিশ কমিশনার কিসেন্ট সিওয়েল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পদোন্নতি প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন খন্দকার আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশনের (বাপার) এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সার্জেন্ট এরশাদ সিদ্দিকীসহ বাপার অন্যান্য সদস্যরা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সুরঞ্জিত কান্তি দে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পশ্চিম শাকপুরা গ্রামের সুনীল কান্তি দে ও নমিতা দের দ্বিতীয় পুত্র। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৯০ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৯২ সালে নাসিরাবাদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনন্দমোহন কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ২০০০ সালে ডিভি লটারিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পর ২০০৩ সালে এনওয়াইপিডির অধীনে ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০০৭ সালে ৩১ বছর বয়সে পুলিশ একাডেমিতে অফিসার হিসেবে ট্রেনিং শুরু করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ব্রুকলিনের ট্রানজিট ডিস্ট্রিক ৩০ এ পুলিশ অফিসার হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর ট্রানজিট ডিস্ট্রিক ৩৩ এর অধীনে এন্টি ক্রাইম ইউনিটে দীর্ঘ একযুগ ধরে সাদা পোশাকে পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন।
দক্ষতা ও চৌকসের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি ২০১০ সালে বছরের সেরা পুলিশ অফিসারের (কপ অব দ্য ইয়ার) সম্মাননা অর্জনের পাশাপাশি ১২ বারের অধিক কপ অব দ্য মানথ হিসেবে ভূষিত হন। বিভিন্ন সময়ে বন্দুকসহ অনেক দুর্ধর্ষ আসামি গ্রেপ্তার করেন বলে সূত্রে জানা যায়।
পদোন্নতির ব্যাপারে তার বড় ভাই বিশ্বজিৎ দে বলেন, আমাদের তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুরঞ্জিত দে দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকে সে অত্যন্ত মেধাবী ও কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। তার সাফল্যে আমাদের পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত।
ছেলে পৃথিবী দে, মেয়ে প্রকৃতি দে ও সহধর্মিণী দূর্বা সরকারকে নিয়ে কুইন্সের ওজোনপার্কে বসবাস করেন তিনি। সুরঞ্জিত কান্তি দে তার এই সাফল্যের জন্য বাবা-মা, সহধর্মিণী ও ভাইবোনদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
এদিকে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এনওয়াইপিডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। নিয়মিত বাহিনীতে সাড়ে চার শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন ক্যাপ্টেন, ১০ জন লেফটেন্যান্ট, ৩৯ জন সার্জেন্ট ও ১৫ জন ডিটেকটিভ রয়েছেন। এছাড়াও সাত শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ, অর্ধ শতাধিক ট্রাফিক সুপারভাইজার, স্কুল সেইফটি এজেন্ট, স্কুল ক্রসিং গার্ডসহ অন্যান্য ইউনিটে হাজারের বেশি বাংলাদেশি অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।