বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দুশ্চিন্তা যেন কাটছেই না। প্রায় প্রতিদিনই জরুরি ও প্রয়োজনীয় কোনো না কোনো পণ্যের আমদানি দায় মেটানোর জন্য রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। মূলত বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার চেয়ে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় বাধ্য হয়েই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
এতে প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। এর মধ্যেই চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) জুলাই-আগস্ট মেয়াদের প্রায় ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিনশেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৯ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবারও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস ১ দিনে (১ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) রিজার্ভ থেকে ২৫৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এ হারে যদি ডলার বিক্রি করা হয়, তা হলে অর্থবছর শেষে ডলার বিক্রির নতুন রেকর্ড করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ ব্যাপক চাহিদার পরও গত অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। যদিও বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি।
মহামারী করোনা সংক্রমের ঊর্ধ্বগতির সময়ে আমদানিতে ধীরগতি এবং প্রবাসী আয়ে উড়ন্ত গতির ওপর ভর করে গত বছরের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ প্রথমবার ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে, যা ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর পর থেকে রিজার্ভের পরিমাণ কমতে শুরু করে। গত ১২ জুলাই আকুর ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। ওইদিন রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে। এর পর থেকে রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই অবস্থান করছে। তবে চলতি সপ্তাহেই আকুর দেনাবাবদ ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটা পরিশোধ করার পর রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটা হলে সোয়া দ্বুছর আগের অবস্থানে নেমে যাবে রিজার্ভ। যদিও প্রকৃত হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ বর্তমানে আকুর সদস্য। এ দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা চলছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। বেড়েই চলেছে মার্কিন ডলারের দাম। ফলে ক্রমশ কমছে টাকার মান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, প্রতি ডলারের দাম এখন ৯৫ টাকা। তবে এ দামে কোথাও ডলার মিলছে না। ব্যাংকগুলো এখনো আমদানি এলসি নিষ্পত্তিতে ১০৫-১০৬ টাকা আদায় করছে। আর খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৯ থেকে ১১০ টাকায়। অবশ্য কিছুদিন আগে খোলাবাজার ডলারের দর ১২০ টাকায় উঠেছিল। ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম ১১৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়।