ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে পাহাড়-পর্বত, জঙ্গল ও সাত সাগর পাড়ি দিয়ে জার্মানির পতাকাবাহী উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্ক জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করল।
সারাদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছিল। বন্ধু তোফাজ্জেল হোসেন গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিল। তোফাজ্জেল বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোট বগীর, বরগুনা সরকারি কলেজের ১৯৮৭ উচ্চমাধ্যমিক ও ১৯৮৯ বিএসসির মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছাত্র ছিল। তিন যুগের মতো হলো ডিবি পেয়ে আমেরিকা এসেছে। বর্তমানে নিউইয়র্ক কুইন্স শহরের জামাইকা অঞ্চলে রানীর মতো স্ত্রী মরিয়ম আক্তার, এক পুত্র (ক্রিয়েটিভ ফিল্ম মেকার), পুত্রবধূ, এক কন্যা ও ছোট দুই ভাই এবং মা ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ বসবাস করে।
সে নিউইয়র্কের বরগুনা সমিতির সভাপতি। ওর বাড়িতে এই প্রবাসে যৌথ পরিবার দেখে মনে হলো আমি তালতলীতেই এসেছি। দুই মায়ের স্নেহ ও কুইন্স রানী মরিয়ম ভাবির আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধ আজীবন আমাকে ঋণী করে রাখল।
বিকালেই বৃষ্টির মধ্যে বাংলাদেশিদের জংশন, যেখানে সবই বাংলায় হয়, জ্যাকসন হাইটসে নিয়ে গেল। পথে বরগুনা কলেজের সাবেক ভিপি জনপ্রিয় ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট রেজবুল কবিরের বাসা হয়ে তাকে সাথে নিয়ে গেলাম। বরগুনা জেলার গৌরবময় শরিষামুরী ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারের প্রবাসী ব্যাবসায়ী গোলাম সারোয়ার রিটনের অফিসে গেলাম। এলেন কমিউনিটির প্রাণপুরুষ শাহআলম ভাই। সবাই মিলে বেশ আড্ডা ও নৈশভোজ।
পরের দিন আমার সাথে যোগ দিলো বড় ভাইয়ের ছেলে ছগিরুজ্জামান। বন্ধু তোফাজ্জল ও কুইন্সের রানী মরিয়ম ভাবী নিউইয়র্কের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখালো লিবার্টি টাওয়ারসহ। কথা হলো বরগুনার জেসমিন, শাপলা, লাভলি, সোহাগ এবং লিটনের সাথে। দেখা করতে এসেছিল আবু নাফিয়া খান। ফোন করে খবর নিয়েছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আকবর হায়দার কিরণ ও জার্মানির সাবেক বিমান কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ভাই।
দুষ্টুমির ছলে তোফাজ্জলের দুই মাকে বললাম, খালাম্মারা, চুই পিঠা বানাবেন না! রাতে বাসায় এসে দেখি দেশীয় পদ্ধতিতে চালের রুটি ও চুই পিঠা (অনেক এলাকায় বলে সেমাই পিঠা) টেবিলে রেডি।
পরের দিন আমার সৌজন্যে বাড়িতে এক নৈশভোজেরও আয়োজন করে। তোফাজ্জেলের ছেলের বউকে (নোয়াখালীর মেয়ে) জিজ্ঞাসা করলাম, মা তোমরা পানিকে হানি কেন বলো? উত্তরে বললো, ওদের পানি মধুর মতো স্বাদ তাই!
দুইজন মায়ের ভালোবাসা ও মরিয়ম ভাবির মমতাভরা আন্তরিকতায় কাটালাম পুরো সপ্তাহ ধরে। আজ টেক্সাসের ডালাস যাচ্ছি। পৃথিবীর সব মায়ের জন্য অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।