যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়েই কার্যত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। আর বেশ কিছু প্রার্থীই সেই পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছেন। খবর বিবিসির।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো তার দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তেমন সুযোগ তিনি আবারও পেতে পারেন।
ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস নিজেকে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। মঙ্গলবারের নির্বাচনে তিনি দেড় মিলিয়নেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
৪৪ বছর বয়সী ডিসান্টিস হার্ভার্ড ও ইয়েলে লেখাপড়া করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তিনি এখনো তুলনামূলক নতুন। একসময় নৌ বাহিনীতে কাজ করেছেন। ইরাক সফরেও গিয়েছিলেন। ২০১৩-১৮ সময়কালে তিনি প্রতিনিধি পরিষদের স্বল্প পরিচিত একজন সদস্য ছিলেন। তবে ২০১৯ সালে গভর্নর হবার পর থেকে ক্রমশ তারকা হয়ে উঠছেন তিনি। বিশেষ করে তার রক্ষণশীল অবস্থানের কারণে। তার সময়েই প্রথমবারের মতো রাজ্যে রিপাবলিকান ভোটার ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়।
কোভিড মহামারির সময়ে তিনি মাস্ক ও ভ্যাকসিন বিষয়ক বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করেছেন। দাঙ্গা বিরোধী আইন করেছেন ও স্কুলে সমকামী শিক্ষা সীমিত করতে আইনে সমর্থন জুগিয়েছেন।
ট্রাম্প ডিসান্টিসের দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছেন এবং এমনকি ২০২৪ সালে নির্বাচনে দাঁড়ালে তার তথ্য ফাঁস করার হুমকিও দিয়েছেন।
মাইক পেন্স
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে দাঙ্গার আগ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের খুবই অনুগত ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাইক পেন্স। তার পিতা ছিলেন কোরিয়া যুদ্ধের একজন হিরো। তবে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো রেডিও উপস্থাপক হিসেবে।
কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী তের বছর তিনি নিজেকে একজন আদর্শ রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং টি পার্টি মুভমেন্টের সাথে যুক্ত ছিলেন।
২০১৩ থেকে পরবর্তী চার বছর গভর্নর ছিলেন ইন্ডিয়ানাতে। সে সময় তিনি রাজ্যের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর ছাড় দিয়েছিলেন এবং গর্ভপাতকে সীমিত করতে ও ধর্মীয় স্বাধীনতার সুরক্ষা বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন।
৬৩ বছর বয়সী মিস্টার পেন্স তার ধর্ম বিশ্বাসের কারণে আলাদা সুবিধা পাবেন কারণ খ্রিস্টানদের মধ্যে তিনি যে অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন তার একটি আলাদা ভোটিং ব্লক আছে। তারা ২০১৬ সালের নির্বাচনে মিস্টার ট্রাম্পের সমর্থক ছিল।
শান্ত ও স্থির প্রকৃতির মিস্টার পেন্সকে দেখা হয় উচ্চকণ্ঠের ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকর প্রতিনিধি হিসেবে। যদিও গত নির্বাচনের ফল বাতিল না করতে রাজি না হওয়ায় মিস্টার ট্রাম্প মিস্টার পেন্সের সাহসের অভাবকেই দায়ী করেছেন।
ট্রাম্পপন্থীরা গত বছরের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে ব্যাপক হামলা করেছিলো এবং মিস্টার পেন্সের ফাঁসি চেয়েছিলো। এক পর্যায়ে তারা ভাইস প্রেসিডেন্টের ৪০ ফুটের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলো।
এরপর থেকেই তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। মিস্টার পেন্স এবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন যার মধ্যে জর্জিয়ার গভর্নর ব্রায়ান কেম্পও আছেন যার বিরোধীকে সমর্থন দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পেন্স কখনো তার সাবেক বসের সমালোচনা করে কোনো মন্তব্য করেননি।
লিজ চেনি
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির কন্যা লিজ চেনিকে এক সময় রিপাবলিকান পার্টির উঠতি তারকা ভাবা হতো। ২০১৭ সালে পিতার আসনে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন তিনি।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করায় তিনি দলের অভ্যন্তরে সমর্থন হারান এবং পরে মিস্টার ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষেও ভোট দিয়েছিলেন কংগ্রেস ভবনে হামলার পর। তবে তার এই ভূমিকার জন্য মূল্যও দিতে হয়েছে তাকে। উওমিং প্রাইমারিতে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থিত প্রার্থীর বিপক্ষে ৪০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। এখন সেখানে দলের সাথেই সম্পৃক্ত নন তিনি।
ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় কংগ্রেস যে তদন্ত করছ সেখানে রিপাবলিকান দলের দুজন সদস্যের মধ্যে তিনি একজন। কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে মিস্টার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তিনি এখনো নিজেকে রিপাবলিকানই ভাবছেন ও পার্টির পুনরুজ্জীবনের জন্য যা দরকার তাই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মাইক পম্পেও
কানসাস থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য মাইক পম্পেও ২০১৬ সালে সতর্ক করেছিলেন যে ট্রাম্প কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন, যিনি সংবিধানকে উপেক্ষা করবেন।
মর্যাদাপূর্ণ ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমীতে গ্রাজুয়েশন করেছেন তিনি। হার্ভাডে পড়ালেখা করা এই আইনজীবী সিআইএ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন ও ট্রাম্প প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং আনের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক ছাড়া ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো নীতি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তবে তিনি বিতর্কও তৈরি করেছেন। তিক্ততায় জড়িয়েছেন সংবাদকর্মীদের সাথে।
গ্লেন ইয়াংকিন
গত বছর ভার্জিনিয়াতে গভর্নর পদে জিতে তিনি রিপাবলিকান দলকে বিস্মিত করেছিলেন। তিনি শক্তিশালী একজন ডেমোক্র্যাটকে হারিয়েছিলেন। তার রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্র্যাট বাড়ছিলো। বিভাজনের রাজনীতিকে তিনি ‘খুবই তিক্ত’ বলে সমালোচনা করেছেন।
তবে ৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক আলোচনায় আসেন দায়িত্ব গ্রহণের দিনই কোভিড বিধিনিষেধ তুলে ফেলা ও স্কুলে ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি শেখানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর। এবার দলের প্রার্থীদের সমর্থনে তিনি কাজ করেছেন। তবে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হামলার বিষয়ে মন্তব্য করে সমালোচিত হয়ে পরে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
নিক্কি হ্যালি
একসময় তাকে রিপাবলিকান পার্টির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকা মনে করা হতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার অবস্থা কিছুটা মলিন মনে হয়েছে। সাউথ ক্যারোলিনায় পাঞ্জাবি শিখ অভিবাসী পরিবারে জন্ম নেয়া নিক্কি হ্যালি ২০০৯ সালে সবচেয়ে কনিষ্ঠ গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নিজেকে মিস্টার ট্রাম্পের ফ্যান নন বললেনও ট্রাম্প প্রশাসনের তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধির বক্তব্যের সময় তিনি বেড়িয়ে গিয়েছিলেন নাটকীয়ভাবে। আবার অনেক সমালোচনাও কুড়িয়েছেন। ৫০ বছর বয়সী মিস হ্যালির সঙ্গে সাক্ষাত করতে ট্রাম্প গত বছর অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বলে খবর এসেছিলো।
রিক স্টক
রিক স্টক ফ্লোরিডা থেকে নির্বাচিত আইন প্রণেতা। এবার সিনেটে দলীয় প্রার্থীদের জয়ের জন্য কাজ করেছেন।
দেশজুড়ে দলীয় প্রার্থীদের তহবিল সংগ্রহে কাজ করেছেন। দুই দফায় ফ্লোরিডার গভর্নর ছিলেন। এর বাইরে টেক্সাসের সিনেটর ট্রেড ক্রুজ, ম্যারিল্যান্ডের সাবেক গভর্নর ল্যারি হোগান, টেক্সাসের সাবেক গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ও সাউথ ডাকোটার প্রথম নারী গভর্নর ক্রিস্টি নোয়েমের নামও শোনা যাচ্ছে।