রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অর্থবছরের ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) যেখানে লক্ষ্যমাত্রায় চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ২৬ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে চার হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এই সময়ে রাজস্ব আদায়ে মূল তিনটি খাতের কোনোটি থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাসে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৬১ কোটি টাকা। কিন্তু আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় করার টার্গেট ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়। ছয় মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে আদায় করা সম্ভব হয়েছে ৩১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, রাজস্ব ঘাটতি ১৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ৭০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে ১২ মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট রয়েছে ৯২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।
একই ভাবে ছয় মাসে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক (ভ্যাট) আদায় করার কথা ছিল ৫১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাসে প্রকৃত আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। ঘাটতি ১০ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। আয়কর ও ভ্রমণকর খাতে ছয় মাসের আদায় টার্গেট ৪০ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু একই সময়ে আদায় হয়েছে ৩২ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। আদায় ঘাটতি হয়েছে ৭ হাজার ৪২৮ কেটি টাকা।
এ দিকে, সরকারের বিশাল রাজস্ব ঘাটতির কারণে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ব্যাংক ঋণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বাজেটে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত এই ব্যাংক খাত থেকেই ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হয়েছে এক হাজার ৭৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় ১১৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেশি। এই হিসাবে প্রতি মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার পরিমাণ ছিল ৮ হাজার কোটি টাকা এবং প্রতিদিন হিসাবে তা ৫৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) জুলাই-ডিসেম্বর (ছয় মাসে) সময়কালে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছিল ৪৪ হাজার ৬২০ কেটি ৪৪ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে একই সময়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৩৯৫ কোটি ৩৭ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ১৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা।