গণসমাবেশকে ঘিরে সিলেটজুড়ে বিএনপিতে এখন ব্যাপক তোড়জোড়। নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস, উৎসবের আমেজ। ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড়’ সমাবেশ করে সরকারকে কড়া বার্তা দিতে চায় সিলেট বিএনপি। সমাবেশে অন্তত চার লাখ লোক সমাগম ঘটানোই এখন তাদের লক্ষ্য।
চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ আগামী ১৯ নভেম্বর। মহানগরীর চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদরাসা মাঠে হবে এই গণসমাবেশ।
বিএনপি ২০ নভেম্বর গণসমাবেশ করতে চেয়েছিল। তবে ওইদিন এইচএসসি পরীক্ষা আছে। আর পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কতিপয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরমধ্যে আছে, পরীক্ষাকেন্দ্রের দুইশ গজের মধ্যে সভা-সমাবেশ করা যাবে না। বিএনপির সমাবেশস্থলের পাশেই আলিয়া মাদরাসা এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র। এ কারণে গণসমাবেশ একদিন এগিয়ে এনেছে বিএনপি।
বিএনপি সূত্র জানায়, সিলেটে গণসমাবেশকে ঘিরে গত মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই তৎপরতা চলছে। সময় যতো এগিয়েছে, নেতাকর্মীদের তৎপরতাও ততো বৃদ্ধি পেয়েছে। সিলেট বিভাগের চারটি জেলাতেই সমাবেশের প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সিলেট মহানগর, বিভাগের চারটি জেলা শহর ছাড়াও প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যায়েও এই গণসমাবেশের গণসংযোগ করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, গণসমাবেশকে ‘স্মরণীয়’ করে রাখতে সব চেষ্টাই চলছে। বিভাগের প্রত্যেক জেলা বিএনপি নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক ছাড়াও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, মহিলা দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সাথেও বৈঠক করেছে, নির্দেশনা দিয়েছে। এর বাইরে বিএনপির প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন নিজেদের মধ্যে পৃথক বৈঠক করে প্রস্তুতি নিয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পৃথকভাবে প্রচারণা চালাচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে যেসব নেতা বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান, তারাও জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা পৃথক রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ তৈরি করাচ্ছেন। সমাবেশের দিন পরিধানের জন্য নিজেদের অনুসারী, কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করবেন তারা।
বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলছেন, কেন্দ্রের সরাসরি তত্ত্বাবধান ও নির্দেশে চলছে সব কাজ। ইতিমধ্যে দুই দফায় সিলেট সফর করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান এবং দলটির যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন। গত মঙ্গলবারও কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে প্রস্তুতি সভা করে গেছেন।
এদিকে, গণসমাবেশের প্রচারণা সিলেট নগরীতে ভিন্ন রূপ পেয়েছে। নগরীজুড়ে সমাবেশকেন্দ্রিক বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। বিশেষ করে চৌহাট্টা এলাকায় শত শত ব্যানার, বিলবোর্ড টানানো হয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সব কার্যক্রমের মূলে রয়েছে ব্যাপক লোকসমাগমের লক্ষ্য। বিভাগের প্রত্যেকটি জেলা থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি সমাবেশে নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে সিলেট থেকে উপস্থিতি থাকবে সবচেয়ে বেশি। সমাবেশস্থল চৌহাট্টা এলাকা ছাড়িয়ে লোকসমাগম দক্ষিণ দিকে জিন্দাবাজার হয়ে বন্দরবাজার, উত্তর দিকে দরগাহ গেইট হয়ে আম্বরখানা, পূর্ব দিকে হাওয়াপাড়া ছাড়িয়ে মীরবক্সটুলা এবং পশ্চিম দিকে রিকাবিবাজার যাতে ছাড়িয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে।
সমাবেশ ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট, হামলা ও বাধার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এজন্য নির্ধারিত দিনের দু-একদিন আগে থেকেই নেতা-কর্মীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। আগে ভাগেই যেসব নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হবেন, তাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থাও করবেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। ইতিমধ্যে সমাবেশস্থল আলিয়া মাদরাসা মাঠে গত বৃহস্পতিবার থেকে মঞ্চ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপির এই গণসমাবেশে অন্তত চার লাখ লোকসমাগম হবে ইনশাআল্লাহ! সে লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বাধা-বিঘ্ন, ষড়যন্ত্র কোনো কিছুই মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সব বাধা পেরিয়ে সমাবেশ সফল হবে।’
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি বলেন, ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ দেখবেন সিলেটবাসী। দু-একদিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে জনতার ঢল নামবে। লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণে গোটা নগরী ভরে যাবে। গোটা সিলেট বিভাগে ব্যাপক প্রচারণা ও গণসংযোগ চলছে। দায়িত্বশীল নেতারা একেবারে তৃণমূল অবধি ছুটছেন প্রতিদিন। সর্বত্র গণমানুষের স্বতস্ফূর্ত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’