রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাস: বিভ্রান্তিও ছড়াচ্ছে ভাইরাসের মতোই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৬৪ বার

একশরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে এ ভাইরাসে, যার বিস্তার ঠেকাতে আপাতত চীনের ভূখণ্ড ভ্রমণ বন্ধ করেছে হংকং। কিন্তু চীন ও বহির্বিশ্বে ভাইরাসটি যেভাবে ছড়াচ্ছে একই ভাবে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি আর ভুল তথ্যও।
বাদুড়ের স্যুপের ভিডিও

শুরু থেকেই অনলাইনে মানুষজন করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে নানা ধারণা প্রকাশ করতে থাকে। কয়েকটি ভিডিও প্রচার করা হয় যেখানে বলা হয় চীনারা উহানে ভয়াবহ করোনাভাইরাসের বিস্তারের মধ্যেই বাদুড় খাচ্ছে। এ ধরনের একটি ক্লিপে দেখা যায় হাস্যময়ী এক চীনা নারী ক্যামেরার সামনে রান্না করা বাদুড় দেখাচ্ছেন ও পরে বলছেন এর স্বাদ অনেকটা মুরগীর মাংসের মতো।

ভিডিওটি ঘিরে অনলাইনে তীব্র ক্ষোভ দেখা যায় এজন্য যে অনেকে বলতে থাকেন চীনাদের বাদুড় খাওয়াই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ। অথচ ভিডিওটি উহানে করা নয় এবং চীনের সাথেও এর সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি ২০১৬ সালের জনপ্রিয় ব্লগার ও ট্রাভেল শো হোস্ট মেনগিয়ান ওয়াং পালাও ভ্রমণের সময় করা।

অথচ করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর এই ক্লিপটিই নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে। পরে মিস ওয়াং দু:খপ্রকাশ করে বিবৃতিও দেন। তিনি বলেন, ওই ভিডিওতে তিনি স্থানীয়দের জীবনধারাকেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন এবং তার জানা ছিলোনা যে বাদুড় ভাইরাস ছড়াতে পারে। পরে ভিডিওটি সরিয়ে নেন তিনি।

ধারণা করা হয় নতুন করোনাভাইরাসটি উহান শহরের একটি বাজার থেকে ছড়িয়েছে যেখানে সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও নানা ধরণের বন্য প্রাণী বেচাকেনা হতো। যদিও চীনে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় ভাইরাসটির সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাদুড়ের নামও আছে কিন্তু এই স্যুপ দেশটির সবজায়গায় পাওয়া যায়না। তবে ভাইরাসের প্রকৃত উৎস সন্ধানে তদন্ত বা গবেষণা অব্যাহত আছে।

‘পরিকল্পিত প্রাদুর্ভাব’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়ার পর টুইটার ও ফেসবুকে ছড়াতে থাকে যে বিশেষজ্ঞরা এ ভাইরাস সম্পর্কে বহু বছর ধরেই জানতেন। আর এ অভিযোগ প্রথমে যে ব্যবহারকারীরা আনেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক ও ইউটিউবার জর্ডান সাথের।

তিনি ২০১৫ সালে সারে পিরব্রাইট ইন্সটিটিউটের প্যাটেন্ট করা একটি লিংক শেয়ার করেন যেখানে করোনাভাইরাস নিয়ে একটি ভ্যাকসিন তৈরি বা রেসপিরেটরি রোগ প্রতিরোধের চিকিৎসার বিষয়ে বলা হয়েছিলো।

বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন পিরব্রাইট ও ভ্যাকসিন উন্নয়নে অর্থ দিচ্ছেন-এই তথ্য ব্যবহার করে জর্ডান সাথের বলেন এই ভ্যাকসিনে অর্থায়নে লোকজনকে উৎসাহী করতেই পরিকল্পিতভাবে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সাথের টুইট করেছেন, “কয়েক বছর ধরে গেটস ফাউন্ডেশন কত অর্থ দিচ্ছে এই ভ্যাকসিন কর্মসূচির জন্য? এখন কি মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার জন্য?”

অথচ পিরব্রাইটের প্যাটেন্ট নতুন করোনাভাইরাসের জন্য নয়। বরং এটা ছিলো ব্রকাংইটিস ভাইরাসের জন্য যেটিতে মূলত মুরগী আক্রান্ত হয়।

‘জীবাণু অস্ত্র’ ষড়যন্ত্র

অনলাইনে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিত্তিহীন দাবি হলো এই ভাইরাস হলো চীনের জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির অংশ যেগুলো উহান ইন্সটিটিউট অফ ভিরোলজি থেকে লিক হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে তারা ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত দুটি আর্টিক্যালে ইসরায়েলের সাবেক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার একটি বক্তব্যও কৌশলে ছড়িয়ে দেয়া হয়। যদিও আর্টিক্যাল দুটিতে এর কোনো প্রমাণ দেয়া হয়নি। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শত শত পোস্ট হয়েছে।

দি ডেইলি স্টার একই ধরণের আর্টিক্যাল প্রকাশ করেছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে একটি গোপন ল্যাব থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। বিবিসি এ নিয়ে ওয়াশিংটন টাইমসের মন্তব্য চেয়েছিলো।

গুপ্তচর দল

আরেকটি খবরে ভাইরাস ছড়ানোর সাথে যোগ করে দেয়া হয়েছে ক্যানাডার ন্যাশনাল মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবরেটরির নাম। ভিরোলজিস্ট ড: জিয়াংগো কুই, তার স্বামী ও তার একজন ছাত্রকে ওই ল্যাব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে। সেসময় সিবিসির খবরে বলা হয়েছে এর সাথে জননিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই।

আরেকটি রিপোর্টে বলা হয় ড: কুই উহারে চাইনিজ একাডেমী অফ সায়েন্সেস এর একটি ল্যাবরেটরিতে গেছেন দু বছরে দুবার করে। একটি টুইট যা রিটুইট হয়েছে অন্তত ১২ হাজার বার ও ১৩ হাজার লাইক পেয়েছে- সেটিতে দাবি করা হয় ড: কুই ও তার স্বামীর একটি গুপ্তচর দল আছে। আর তার স্বামীকে বরা হয় যিনি করোনাভাইরাস গবেষণায় বিশেষজ্ঞ। এর কোনো দাবির পক্ষেই কোনো যুক্তি নেই। সিবিসি রিপোর্ট বলছে এসব দাবি ভিত্তিহীন।

‘উহান নার্স ভিডিও’

একটি ভিডিওর অনেকগুলো ভার্সন হয়েছে। বলা হচ্ছে হুবেই প্রদেশে একজন ডাক্তার কিংবা নার্স এ ভিডিও করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ এটি দেখেছে। একজন কোরিয়ান এর মধ্যে একটি ইউটিউবে দিয়েছেন যেটি বেশি প্রচার পেয়েছে। তবে এখন আর সেটি দেখা যাচ্ছে না।

ভিডিও ইংরেজি সাব টাইটেল থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ওই নারী উহানের একটি হাসপাতালের নার্স। যদিও ভিডিওতে তিনি বলেননি যে তিনি নার্স নাকি ডাক্তার। তিনি সুরক্ষিত পোশাক পড়েছেন এবং অপরিচিত একটি জায়গা থেকে ভিডিও করেছেন। তার দাবি প্রকৃত আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৯০ হাজার ।

যদিও সরকারিভাবে এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন এই ভাইরাস দুই ধাপে ১৪ জনকে আক্রান্ত করতে পারে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছেন একজন আক্রান্ত ব্যক্তির সংক্রমিত হতে পারে ১দশমিক ৪ থেকে ২ দশমিক ৫।

ভিডিওটি কোথায় করা হয়েছে বোঝা না গেলেও ওই নারী হুবেই’র অধিবাসী বলেই মনে করা হচ্ছে যিনি হয়তো তার ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরেছেন।

“আমার মনে হয় তিনি মনে করছেন যে তিনি সত্যি বলছেন। কারণ কেউ আসলে জানেনা যে সত্যি কোনটি,” বলছিলেন বদিউকাও, অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একজন চীন রাজনৈতিক কর্মী।

“কোনো স্বচ্ছতা না থাকাতেই আতঙ্ক আর গুজব ছড়াচ্ছে”। সূত্র : বিবিসি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com