স্বপ্ন দেখতে সবাই পছন্দ করে। তবে স্বপ্ন দেখা ও তা বাস্তবায়ন করার মধ্যে আকাশ-জমিন পার্থক্য রয়েছে। ভারতের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন, ‘স্বপ্ন সেটি নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে, স্বপ্ন সেটিই যার প্রত্যাশা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’ সফলতা অর্জন করা খুব কঠিন কাজ নয়। আবার তা খুব সোজাও নয়। সফলতা অর্জনের জন্য চাই পরিকল্পনামাফিক পরিশ্রম। পরিকল্পনাই যেকোনো কাজের অর্ধেক। পরিশ্রমেই সফলতার চাবিকাঠি সবাই জানি। তাই পরিশ্রম নিজের অন্তরে গেঁথে নিতে পারলেই সফলতা আসন্ন। তবে সফলতা অর্জনের জন্য আমাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় এবং সম্মুখীন হতে হয় বহু প্রতিবন্ধকতার। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যারা কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সফলতা অর্জন করেছেন।
মূলত সফলতার পথে প্রতিবন্ধকতা আসে আমাদের অন্তর থেকে। আমরা ভাবি আমরা কোনো কিছুই করতে পারব না। আর এর মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে আমাদের আশপাশের মানুষ। যাদের সাথে আমাদের প্রতিদিনের আনাগোনা। যাদের সাথে চলাফেরা করলে ক্রমবর্ধমান নিচের দিকে নামার সম্ভবনা আছে, তাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা সৎ লোকের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো, কারণ মানুষ বন্ধুত্বের আদর্শে গড়ে ওঠে।’ মোদ্দা কথা, আমরা যখন কোনো মোটিভেশনাল কথা শুনি, তখন আমাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। তখন আমরা কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অন্য দিকে আমরা যদি নেতিবাচক মানুষের সাথে চলাফেরা করি, তাদের হতাশামূলক কথা শুনে আমরা হতাশায় পড়ে যাই। সে জন্য আমাদের তাদের সাথে প্রয়োজনমতো চলাচল করতে হবে। তাদের কথাই শুনতে হবে, যাদের কথা শুনলে আমরা ক্রমবর্ধমান উপরের দিকে উঠতে পারব।
টমাস আলভা এডিসনের কথা হয়তো আমরা সবাই জানি। বৈদ্যুতিক বাতি, চলচ্চিত্র অডিও রেকর্ডিং, এনক্রিপ্টেড, টেলিগ্রাফ সিস্টেম, আধুনিক ব্যাটারি, এরকম হাজারের উপরে আবিষ্কার করে তিনি পৃথিবীকে ঋণী করে গেছেন। কিন্তু এই মহান ব্যক্তি মাত্র ১২ সপ্তাহ স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১২ সপ্তাহ স্কুলে পড়ে হয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত একজন বিজ্ঞানী। তার পেছনে একটাই কারণ ছিল- তার ‘মা’ ও তার অক্লান্ত পরিশ্রম। ছোটবেলায় টমাস আলভা এডিসন ‘ স্কারলেট ফিভার’ নামে এক জটিল রোগে আক্রান্ত হন। যার ফলে তিনি কানে কম শুনতেন। ওই ১২ সপ্তাহে স্কুলে তার পারফরম্যান্স এতটাই খারাপ ছিল, তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। টমাসের মাকে একটি চিঠি দেয়া হয় স্কুল থেকে, সেখানে লেখা ছিল, টমাস পড়াশোনায় একেবারে অমনোযোগী, একদম মেধাশূন্য, তাকে আমাদের স্কুলে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু এডিসনের মা চিঠিটা তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে পড়ছিলেন এভাবে- টমাসের মেধাশক্তি সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে অনেক ভালো। এত বড় মেধাবী স্টুডেন্টকে পড়ানোর সক্ষমতা সাধারণ স্কুলের নেই। কাজেই তাকে যেন বাসায় রেখে পড়ানো হয়। মায়ের এই কথায় টমাসের অন্তর অনুপ্রাণিত হয়। পরবর্তীতে সে কঠিন, কঠিন বিষয় অধ্যয়ন করে, যার ফলে বিশ্ববাসীর সামনে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
তাই নিজের মধ্যে কিছু বিশেষ গুণের অভ্যাস করতে হবে। আল্লাহর নামে দিনটি শুরু করা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, রাতের প্রথম দিকে ঘুমিয়ে পড়া, ফজরের পর না ঘুমানো, সময়ের মূল্য দিতে হবে। কখনো ব্যর্থতায় ভেঙে পড়া যাবে না। অন্যের কথায় কর্ণপাত না করা এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি অটুট থাকতে হবে। নিজেকে ছোট মনে করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন ব্যক্তির সাথে চলাচল করুন, যার কথা আপনাকে পেছনে নয়; বরং ঊর্ধ্বগামী হওয়ার দিকে নিয়ে যাবে। তবেই সাফল্য আপনার কাছে ধরা দেবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়