দীর্ঘ ছয় বছর থেকে বন্ধ রয়েছে সিলেটের সব ক’টি পাথর কোয়ারি। এতে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন কোয়ারির সাথে জড়িত পাথর ও পরিবহন ব্যবসায়ী, বেলচা, বারকি, পরিবহন ও লোড-আনলোড শ্রমিকরা।
এ দিকে গত ৩১ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর চার মাস পর ডিও লেটারও দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। কোয়ারি খোলার সরকারি সিদ্ধান্তের পর থেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তের সাড়ে ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও খুলে দেয়ার ব্যাপারে এখনো জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত কবে আসবে সে প্রতীক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। অন্য দিকে পাথর তোলার ভরা মৌসুমে কোয়ারি চালুর ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে সবুজ সঙ্কেত না মেলায় হতাশ পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত না এলে ফের ধর্মঘট ডাকা হবে।
জানা যায়, সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জসহ দেশের সর্ববৃহৎ সাতটি পাথর কোয়ারির অবস্থান কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায়। গত ৯ ও ১০ নভেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করেন। পাঁচটি কোয়ারির ভৌগোলিক জরিপ ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জরিপের পর সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত দল। এতে কমিটির সদস্যরা কোয়ারি চালুর বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। কথা ছিল সরেজমিন পরিদর্শনের পরই কোয়ারি চালু হবে।
এ ব্যাপারে যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ নায়েব আলী বলেন, আমরা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে। প্রতিবেদনে কোয়ারি চালুর পক্ষে বা বিপক্ষে কী মতামত দেয়া হয়েছে- সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি।
এ দিকে ফের পরিবহন ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে সিলেট বিভাগীয় ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং, লোভাছড়াসহ সব পাথর কোয়ারির সাথে সিলেটের অর্থনীতি জড়িত। কোয়ারি বন্ধ থাকায় ১০ লাখ পাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিক এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক পথে বসেছেন। পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে ছয় বছর ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন ও দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। মন্ত্রণালয় দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না জানালে এ মাসের শেষের দিকে ফের ধর্মঘট ডাকা হবে।এর আগে ১ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এরও আগে ২০১৯ ও ২০২১ সালে পাথর ব্যবসায়ী, স্টোন ক্রাশার মালিক-শ্রমিকসহ পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। পরে অপরিকল্পিতভাবে ও যন্ত্রের সাহায্যে পাথর তোলা অব্যাহত থাকলে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের প্রধান ভোলাগঞ্জ কোয়ারি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ কোয়ারির মধ্যে জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দিতে পাথর তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। পরে আবার উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কোয়ারি এলাকায় চুরি করে পাথর তোলা অব্যাহত রয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কোয়ারি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের মতামত দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসন কাজ করবে।