মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

রসিক নির্বাচন : প্রচারণা না থাকায় ইভিএম মক ভোটিংয়ে সাড়া নেই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১০১ বার

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। শুক্রবার থেকে নির্বাচন কমিশনের ভোটার শিক্ষণ (মক ভোটিং) কার্যক্রমে সাড়া দেয়নি ভোটাররা। তবে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে ইভিএম শেখানোর কার্যক্রম চলছে বাড়ি বাড়ি।

শুক্রবার প্রচারণার ১৫তম দিনে সকাল ১০টা থেকে নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের খাসবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, ১১টার দিকে শুরুর সময় পাঁচ থেকে সাতজন ভোটার এলেও পুরো দিন ২০ জন ভোটারও আসেননি।

এই কেন্দ্রে ভোট প্রশিক্ষণ নিয়ে আকলিমা নামের এক গৃহবধূ জানান, কোনো দিন ভোট দেইনি। শিখলাম, দেয়া যাবে। কিন্তু ঠিকমতো ভোট গণনা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে তার।

আবু আজগার নামের এক ভোটার জানান, মেশিন দিয়ে ভোট দেয়া শিখাইল। কিন্তু কিছুই বুঝলাম না। আগে ব্যালট দিয়ে নিজে দেখে শুনে ভাজ করে দিছিলাম। কিন্তু এখন মেশিন দিয়ে দিলে কী হবে বুঝেই আসে না আমার।

২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু সায়েম জানান, আমরা মাইকিং করেছি। তবুও লোকজনের উপস্থিতি কম। আমরা সবাইকে ভোটার শিক্ষণ কেন্দ্রে আসার অনুরোধ করছি। শনিবারও মক ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম চলবে। অসুস্থ্য, বৃদ্ধদের আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রশিক্ষণ দিবো। তিনি আরো বলেন, এক্ষেত্রে এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল করিম নামের এক বৃদ্ধ জানান, সরকারি লোক মেশিনে ভোট দেয়ার বিষয়টি আমাদের বলে নাই। কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থী এবং মেয়র প্রার্থী ইভিএমএ ভোট দেয়ার বিষয়টি বাড়ি বাড়ি শেখাচ্ছে। সরকারিভাবে যদি বিভিন্ন মোড়, পাড়া, মহল্লায় বেশি করে প্রজেক্টর দিয়ে শেখানো হতো, মানুষের আগ্রহ থাকতো। তাহলে ভোট নষ্ট কম হতো। এখনো অনেক মানুষ আছে, যারা ভোট দিতেই যাবেন না।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: আবদুল বাতেন জানান, আমরা আশা করি সবাই মক ভোটিংয়ে আসবেন। প্রথম দিনে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও আশাহত। তিনি আশা করেন সম্ভাব্য সকল জায়গায় আমরা ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম চালাবো। তিনি কাউন্সিলর প্রার্থীদের সহযোগিতা চান।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা অভিযোগ করেছেন, আমরা বার বার ইসিকে মক ভোটিং সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কথা বলেছি। কিন্তু তারা শোনেনি। আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার পারমিশন নিয়ে প্রচারণার প্রথম দিন ৯ ডিসেম্বর থেকে ডেমো ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোটারদের শেখানোর কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু কারো অভিযোগে নির্বাচন কমিশন আমাদের আচরণবিধির দোহাই দিয়ে সেই কাজ থেকে বিরত রাখে। নির্বাচন কমিশন থেকে ২০ ডিসেম্বর সচেতনতা তৈরির কথা বলা হয়। কিন্তু তারা তা করেনি। সে কারণে শুক্রবারের মক ভোটিংয়ে কোনো সাড়া দেয়নি ভোটাররা। এছাড়াও ভোটারদের মক ভোটিংয়ে আনার জন্য যে প্রচারণা করা দরকার সেটিও নির্বাচন কমিশন করেনি। কিভাবে চার লাখ ২৬ হাজার ভোটারের কাছে যাবে ইসি, সেটি আমার বোধগম্য নয়। অনেক ভোটার আসবেন না। ভোট পোলিং কম হবে। অনেক ভোট নষ্টও হবে। তবুও তিনি ভোটার শিক্ষণ কার্যক্রম শুধু কেন্দ্রে নয় হাটবাজার, মোড়, জনবহুল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার দাবি জানান।

শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বেলা সোয়া ১১টার দিকে নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে ধাপ পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে মেডিক্যাল মোড় পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। জুমার নামাজের পরে বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে পাকার মাথা পাণ্ডার দীঘি পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। সন্ধ্যার পর থেকে নুরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, লালকুঠির মোড় ও বুড়িরহাটে পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক এস এম ইয়াসীর, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক, লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান নাজিম, শাহীন হোসেন জাকির, ইয়াসিন আরাফাত আসিফসহ জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সকাল ১১টা থেকে গণসংযোগ করেন পানবাজার সাঁওতালপাড়া, মেকুরা, কলাবাড়ি, আমবাড়ি ও বালাটাড়ি এলাকায়। এ সময় তার সাথে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষারকান্তি মণ্ডল, সহ-সভাপতি আবুল কাশেমসহ নেতাকর্মীরা।

এ সময় ডালিয়া বলেন, এই নির্বাচনে মানুষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতীক নৌকাকে বিজয়ী করবে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বুঝে নিবে। সেজন্য আমি যেখানেই যাচ্ছি, মানুষ আমাকে গ্রহণ করছেন। আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবো, ইনশাআল্লাহ।

এ নির্বাচনে জাসদ, জাকের পার্টি, ইসলামি আন্দোলন, বাংলাদেশ কংগ্রসেস মনোনিত এবং ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নগরীর বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ করেন। সংরক্ষিত কাউন্সিলরে ৬৭ এবং সাধারণ কাউন্সিলরে ১৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২৭ ডিসেম্বর ভোট অনিুষ্ঠিত হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতর থেকে জানা যায়, এবার ভোটার ও কেন্দ্র সংখ্যা বেড়েছে। আগের নির্বাচনে ১৯৩টি কেন্দ্র থাকলেও ৩৬টি বেড়ে কেন্দ্র সংখ্যা হয়েছে ২২৯টি। এবার স্থায়ী ভোট কক্ষ করা হয়েছে এক হাজার ৩৪৯টি এবং অস্থায়ী ভোট কক্ষ ১৯৩টি। ২০১৭ সালের নির্বাচনের ভোটার সংখ্যার তুলনায় এবার ভোটার বেড়েছে ৩২ হাজার ৫৭৫ জন। ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন থেকে বেড়ে চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন হয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং নারী দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com