মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন

পাবনায় ৭ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১১২ বার

চলতি মওসুমে পাবনায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেয়াজের চাষ হচ্ছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ টন। কৃষি অফিস জানিয়েছে, জেলায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে গোটা পেঁয়াজ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে কম আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে। এতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাত লাখ টন। এছাড়া ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয়, তা হলে এবার পেঁয়াজ ও রসুনের আশাতীত ফলন পাওয়া যাবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি ছিল। পেঁয়াজ ও রসুন রোপনের জন্য গড়ে প্রতিজন শ্রমিকের দিন হাজিরা ছিল ৫০০ টাকা। এছাড়া বাজারে রাসায়নিক সার এবং কম্পোস্ট সারের পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে পাবনা জেলায় পেঁয়াজ প্রতি হেক্টরে ১৪ টন হিসেবে সুজানগর উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টরে দুই লাখ ৮৪ হাজার টন, সাঁথিয়ায় ১৬ হাজার ৯৭০ হেক্টরে দুই লাখ ৩৮ হাজার টন, পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭০ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে ২১ হাজার টন, বেড়ায় তিন হাজার হেক্টরে ৪২ হাজার টন, ফরিদপুরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হাজার ৫৩০ হেক্টরে ২১ হাজার ৪২০ টন ও আটঘড়িয়ায় এক হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলায়।

চলতি রবি মওসুমে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৬ হাজার টন। এবার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের বেইশ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টন বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।

কৃষকরা জানান, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশীয় বাজারে দাম বেড়ে কয়েক গুণ হয়ে যায়। দাম বেশি হওয়ায় কৃষকেরা লাভের আশায় বেশি জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। আবাদ বাড়ার প্রভাব পড়েছে এবার পেঁয়াজের দানা (বীজ) বিক্রিতেও। দামও বেড়েছে। গত বছর প্রতি কেজি বীজ বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৫০০ টাকা দরে। এবার বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি চার হাজার থেকে চার হাজাার ৫০০ টাকা দরে।

জানা গেছে, এবার জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টন। গত বছর মওসুমের শুরু থেকেই রসুনের বাজার ছিল চড়া। এবার কৃষকেরা রসুন চাষের জন্য আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই জমি প্রস্তুত করেছেন। চলনবিল এলাকার কৃষকেরা বন্যার পানি নামার পরপরই বিনা চাষে রসুন রোপন করে থাকেন। জেলায় সবচেয়ে বেশি রসুন আবাদ হয়ে থাকে চাটমোহরে।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, প্রতি হেক্টরে পেঁয়াজ উৎপাদন গড় হিসাব ধরা হয়েছে ১৪ টন এবং রসুন উৎপাদন ধরা হয়েছে ১২ টন। পাবনার কৃষকরা পেঁয়াজ জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেছেন। কোথায়ও তিনটি আবার কোনো কোনো এলাকায় পুরো আবাদে চারটি করে সেচ দেয়া হয়। এই অঞ্চলের কৃষকেরা পেঁয়াজ জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, সার কীটনাশকসহ সকল ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহ ও সগযোগিতা করা হচ্ছে। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরেট অব পটাশ (এমপি) এবং ইউরিয়া সারের দাম কমায় কৃষকেরা পরিমাণ মত সার প্রয়োগ করতে পারছেন। দেশে সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা জেলায়।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার পেঁয়াজ বীজের মান ভাল ও দাম কম ছিল। সুজানগর উপজেলার মানিকহাট, উলাট, বামনদি, চরদুলাই, বনকোলা এলাকার কৃষকরা জানান, এবার পেঁয়াজ বীজে ভাল চারা হয়েছে। বিস্তীর্ণ গাজনা বিল এলাকা এবং সাঁথিয়ার ঘুঘুদহ বিল, আফড়াবিল এলাকার গৌরিগ্রাম, বিষ্ণুপুর, ক্ষেতুপাড়া, চরপাড়া, রঘুরামপুর, মাছগ্রামের কৃষকেরা হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তবে আবাদের সময়ে ক্ষেতে মজুরের অভাব ছিল। এজন্য প্রতিদিন একজন ক্ষেত মুজুরকে দিতে হয়েছে নগদ ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা। এছাড়া দুপুরের খাবার দিতে হয়েছে।

সুজানগরের চর দুলাই গ্রামের আদর্শ কৃষক মোত্তালিব মিয়া জানান, প্রতি বিঘা জামিতে পেঁয়াজ বীজ রোপনে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেছে। এই ২০ জন শ্রমিকের শ্রম মূল্য ও খাবার বাবাদ খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা। রাসায়নিক সার ও কম্পোস্ট সার দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকা এবং সেচ খরচ লাগবে এক হাজার ৩০০ টাকা। নিড়ানি খরচ লাগবে চার হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া উত্তোলন ও পরিবহন খরচ যোগ হলে প্রতি বিঘায় খরচ হয় প্রায় ৩৯ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৫৫ মন। যদি বর্তমান বাজার দর ঠিক থাকে তাহলে মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজ বিক্রি হবে প্রতিমণ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকের লাভ হবে ২৫-২৬ হাজার টাকা।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবির জানান, বেড়া, চাটমোহরসহ পুরো জেলায় পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে সার কীটনাশকেরও কোনো সঙ্কট নেই। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং ভালো দাম পেলে কৃষকেরা লাভবান হবেন।

কৃষি অফিস জানিয়েছে, জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার টন। জেলার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বিনাচাষে রসুন আবাদ হয়ে থাকে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই কৃষকেরা রসুন বীজ রোপন করেছেন। পেঁয়াজ এবং রসুন পরিচর্যায় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকেরা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com