ফুটবল সমর্থকদের জন্য ২০২২ সালটা দারুণ কেটেছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ সময় বিশ্বকাপসহ অনেক বড় বড় ইভেন্ট মাঠে গড়িয়েছে। যেখানে বছরের শুরুতে আফ্রিকা কাপ অব নেশন্স ও শেষটা হয় কাতার বিশ্বকাপে। এমন একটি বছর ভক্তরা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন।
পুরো বিশ্বজুড়ে অসংখ্য আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ কয়েকটি বাছাই করে নিচে দেওয়া হলো।
এই আসরটি ‘আফ্রিকান নেশন্স কাপ’ হিসেবেও পরিচিত। যদিও এ বছর হওয়া আসরটি ২০২১ সাল হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এটি এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সিএএফের অধীনে থাকা ৫৪টি দেশই আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে খেলার যোগ্যতা রাখে। তবে এদের মদ্যে সেরা ২৪টি দেশ মূল টুর্নামেন্টে খেলে।
যেখানে দলগুলো ৬টি আলাদা গ্রুপে অংশগ্রহণ করে। রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে গ্রুপে এক দল আরেক দলের মুখোমুখি হয়। গ্রুপের সেরা দুই দল নকআউট পর্বে খেলে। এভাবেই একে একে সেরা দুই দল ফাইনালে যায়।
আয়োজক
এ বছর ক্যামেরুন আফ্রিকান নেশন্স কাপের আয়োজন করে।
চ্যাম্পিয়ন
ফাইনালে মিশরকে হারিয়ে ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়ন হয় সেনেগাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের মূল সময় গোলশূন্য থাকায় টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে জয় পায় সেনেগালিজরা। আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে এটি সেনেগালের প্রথম শিরোপা। যদিও এর আগে তারা ২০২২ ও ২০১৯ সালে ফাইনাল খেলেছিল।
অ্যাওয়ার্ড
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়: সাদিও মানে (সেনেগাল)
গোল্ডেন বুট: ভিনসেন্ট আবুবাকার (ক্যামেরুন) (৮ গোল)
সেরা গোলরক্ষক: এদুয়ার্দো মেন্দি (সেনেগাল)
সেরা তরুণ খেলোয়াড়: ঈসা কাবারো (বুরকিনা ফাসো)
ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড: সেনেগাল
২০২২ এএফসি নারী এশিয়ান কাপ: ২০ জানুয়ারি-৬ ফেব্রুয়ারি
এশিয়া ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) নারী এশিয়ান কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টটি আয়োজন করে। এএফসি পুরুষ এশিয়ান কাপের মতো প্রতি চার বছর পর পর এটি অনুষ্ঠিত হয়। ১২ দল নিয়ে টুর্নামেন্টটি হয়। আসরটি গ্রুপ পর্ব, নকআউট, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হয়ে থাকে।
২০২২ সালের নারী এশিয়ান কাপ আয়োজক দেশ ছিল ভারত। যেখানে ২০২৬ সালে পরের আসরটি গড়াবে।
চ্যাম্পিয়ন
ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় চীন।
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়: ওয়াং শানশান (চীন)
সেরা গোলদাতা: স্যাম কের (অস্ট্রেলিয়া) (৭ গোল)
সেরা গোলরক্ষক: জুহু ইউ (চীন)
ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড: দক্ষিণ কোরিয়া
২০২২ ফিনালিসিমা: ১ জুন
দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল সংস্থা কনমেবল ও ইউরোপিয়ান ফুটবল সংস্থা উয়েফা যৌথভাবে এই আয়োজন করে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের সফলতায় প্রথমবার ১৯৮৫ সালে এই আসরটি হয়। মাত্র এক ম্যাচের এই আসর কোপা আমেরিকা ও উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নের মধ্যে হয়ে থাকে।
এবার ২০২১ কোপা আমেরিকাজয়ী আর্জেন্টিনা ও ২০২০ ইউরোজয়ী ইতালির মধ্যে খেলা হয়। ম্যাচে ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা।
ফিনালিসিমা এর আগে সবশেষ ১৯৯৩ সালে আয়োজন হয়েছিল। সেবার ডেনমার্ককে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা।
আয়োজক
ইংল্যান্ড
চ্যাম্পিয়ন ও অ্যাওয়ার্ড
প্রায় ২৯ বছর পর আর্জেন্টিনা আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়। ফাইনালে ম্যাচ সেরা হন লিওনেল মেসি।
উয়েফা নারী ইউরো ২০২২: ৬-৩১ জুলাই
ইউরোপিয়ান নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর হচ্ছে উয়েফা নারী ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। এটি উয়েফাই আয়োজন করে। প্রতি চার বছর পর এটি অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে ইংল্যান্ডে আসরটি হয়।
উয়েফার সদস্য দেশের নারী দল নিয়ে টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাছাইপর্ব শেষে মূল পর্ব মাঠে গড়ায়। বাছাইপর্বে ৫২ দল অংশ নেয়। আর মূল পর্বে ১৬ দল খেলতে পারে।
আয়োজক
ইংল্যান্ড
চ্যাম্পিয়ন
এ বছর ইংল্যান্ড ও জার্মানি ফাইনাল খেলে। যেখানে ২-১ গোলে জিতে শিরোপা তুলে ধরে ইংলিশরা।
অ্যাওয়ার্ড
আসরের সেরা খেলোয়াড়: বেথ মেয়াড (ইংল্যান্ড)
আসরের তরুণ খেলোয়াড়: লেনা ওবেরডর্ফ (জার্মানি)
আসরের সেরা গোল: অ্যালেসিয়া রুশো (ইংল্যান্ড) (সুইডেনের বিপক্ষে)
কোপা আমেরিকা ফেমেনিনা ২০২২: ৮-৩০ জুলাই
দক্ষিণ আমেরিকার নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরকে বলা হয় কোপা আমেরিকা মেমেনিনা। আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টটি কনমেবল আয়োজন করে। প্রতি চার বছর পর পর আসরটি মাঠে গড়ায়।
১০টি দল নিয়ে আসরটি গড়ায়। দুটি গ্রুপ ৫ দলে বিভক্ত হয়ে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলা হয়। গ্রুপের সেরা দুই দল নকআউট পর্বে তথা সেমিফাইনালে খেলে। এরপর ফাইনাল।
আয়োজক
২০২২ সালের কোপা ফেমেনিনা আয়োজক দেশ কলম্বিয়া
চ্যাম্পিয়ন
ফাইনাল খেলে ব্রাজিল ও কলম্বিয়া। যেখানে কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে ব্রাজিল।
অ্যাওয়ার্ড
গোল্ডেন বল: লিন্দা কেইসেদো (কলম্বিয়া)
সর্বোচ্চ গোলদাতা: ইয়ামিলা রদ্রিগেজ (আর্জেন্টিনা, ৬ গোল)
গোল্ডেন গ্লাভ: লোরেনা (ব্রাজিল)
ফেয়ার প্লে: চিলি
২০২২ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ: ৬-১৯ সেপ্টেম্বর
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নারী দল নিয়ে আয়োজন হয় সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০১০ সালে শুরু হওয়া আসরটি আয়োজন করে সাফ। ৭টি দেশ এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়। প্রতি ২ বছর পর পর আসরটি মাঠে গড়ায়।
আয়োজক
নেপাল
চ্যাম্পিয়ন
আয়োজক নেপালকে ফাইনালে ৩-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ নারী দল। প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরে দেশটি।
অ্যাওয়ার্ড
সেরা খেলোয়াড়: সাবিনা খাতুন (বাংলাদেশ)
সেরা গোলরক্ষক: রুপনা চাকমা (বাংলাদেশ)
সর্বোচ্চ গোলদাতা: সাবিনা খাতুন (বাংলাদেশ)
ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড: বাংলাদেশ
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ: ২০ নভেম্বর-১৮ ডিসেম্বর
চরম নাটকীয়তা শেষে ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান করে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা জেতালেন লিওনেল মেসিরা।
শ্বাসরুদ্ধ ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ২-২ গোলে সমতায় ছিল। পরে অতিরিক্ত সময়ে দুদল আরও একটি করে গোল দিলে ৩-৩ গোলে ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ায়। সেখানেই বাজিমাত করেন আর্জেন্টিনা তথা দলটির গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
যদিও টাইব্রেকারে কিলিয়ান এমবাপ্পের প্রথম শটটি ঝাপিয়ে পড়লেও রুখতে পারেননি মার্তিনেজ। এগিয়ে যায় ফ্রান্স। পরে মেসি গোল করে সমতায় ফেরান। কিন্তু ফ্রান্সের দ্বিতীয় করতে আসা কিংসলে কোম্যানের শট আটকে নায়ক বনে যান মার্তিনেজ। আর তৃতীয় শটে অরেলিয়েন চুয়োমেনি পোস্টের বাইরে মেরে মিস করেন।
এরপর রানদাল কোলো মুনাই ফ্রান্সের চতুর্থ শটে গোল করলেও অপরদিকে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শটে যথাক্রমে পাওলো দিবালা, লিওনার্দো পারেদেস ও গনজালো মন্তিয়েল গোল করলে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতে আর্জেন্টিনা।
অ্যাওয়ার্ড:
গোল্ডেন বল: লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
গোল্ডেন বুট: কিলিয়ান এমবাপ্পে (ফ্রান্স) (৮ গোল)
গোল্ডেন গ্লাভ: এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (আর্জেন্টিনা)
ফিফা তরুণ খেলোয়াড় অ্যাওয়ার্ড: এনজো ফার্নান্দেজ
ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড: ইংল্যান্ড