বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিরবের পরকীয়ার অভিযোগ নিয়ে সুর পাল্টালেন স্ত্রী ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান

ছাড়ের পর খেলাপি নবায়নের হিড়িক

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৬৬ বার

নীতিমালায় ঢালাও ছাড় দেওয়ার পর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের (নবায়ন বা নিয়মিত করা) হিড়িক পড়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে ব্যাংক খাতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে নবায়ন হয়েছে প্রায় সাড়ে চার ৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট নবায়নকৃত ঋণের প্রায় ৮১ শতাংশ। একই সময়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি সুদ মওকুফ করা হয়েছে। তবে এর পরও ওই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার খেলাপিদের ছাড় দেওয়াটা ইতিবাচক কিছু বয়ে আনছে না। উল্টো যে ঋণগুলো পুনঃতফসিল মাধ্যমে নিয়মিত করা হচ্ছে, সেই ঋণ পরিশোধে তালবাহানায় আবার খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘এর মাধ্যমে অন্য গ্রাহকদের কাছে এ বার্তা যাচ্ছে যে, ঋণ ফেরত না দিলেও সমস্যা নেই, উল্টো সুবিধা পাওয়া যায়। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য খারাপ হচ্ছে। কারণ এর ফলে কাগজ-কলমে খেলাপি ঋণ কমলেও বাস্তবে খেলাপিদের কাছে পাওনার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।’

ব্যাংক খাতে খেলাপির লাগাম টানতে গণছাড় দিয়ে ২০১৯ সালে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এর আওতায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় সাপেক্ষে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে- ওই নীতিমালার আওতায় ২০১৯ সালে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়।

এর আগে কোনো বছরেই এত পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়নি। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা মহামারী শুরুর পর ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার পাশাপাশি বছরজুড়ে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি। ২০২১ সালে এ বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হয়নি। তবে বকেয়া কিস্তির ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ খেলাপিমুক্ত থাকার সুবিধা দেওয়া হয়। ২০২২ সালেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ ছাড় অব্যাহত রাখা হয়। বিদ্যমান ছাড় অনুযায়ী, যেসব ঋণ ২০২২ সালের ১ এপ্রিল নিয়মিত ছিল, শুধু সেসব ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ২০২২ সালের জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর প্রান্তিকে বড় ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করার কথা, যথাক্রমে তার ৫০, ৬০ ও ৭৫ শতাংশ পরিশোধ করলে ঋণগুলো আর খেলাপি হবে না। আর কৃষি ও সিএমএসএমই ঋণে যে পরিমাণ পরিশোধ করার কথা, তার ২৫, ৩০ ও ৪০ শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকা যাবে। এই ছাড়ের মধ্যে গত জুলাইতে খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলে ঢালাও সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই হয়; আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ পরিশোধে গ্রাহকদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ৫ থেকে ৮ বছর, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর সময় দেওয়া হতো। এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় কোনো খেলাপি ঋণ চার বার পর্যন্ত পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকের পর্ষদই এখন খেলাপি ঋণ নবায়নের সিদ্ধান্ত দিতে পারছে।

সূত্রগুলো বলছে, বিশেষ নীতিমালার আওতায় ২০১৯ সালে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ নিয়ে যারা নিয়মিত হয়েছিলেন, সেসব ঋণের গ্রাহকরা এখন খেলাপি এড়াতে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ নিচ্ছেন বেশি। এ ছাড়া পর্ষদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ায় খেলাপি ঋণ নবায়ন বেড়েছে। এটি ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে ৫ হাজার ৫৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তার আগের তিন মাসে (এপ্রিল থেকে জুন) পুনঃতফসিল করা হয় ৩ হাজার ৭০৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর জানুয়ারি-মার্চে পুনঃতফসিল করা হয় ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরএফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বাড়ার কারণ জানা নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনেই খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়। খেলাপি ঋণ স্বাভাবিক রাখতে যদি প্রয়োজন হয় তা হলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এটি করা উচিত। কারণ এ সুবিধা দেওয়ার ফলে ব্যাংকের টাকা ফেরত আসার একটি সুযোগ থাকে। বারবার সুবিধা দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণ কমছে না কেন- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ুক এটি আমরা কেউ-ই চাই না। তাই এটি কমিয়ে আনতে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে বারবার ছাড় দেওয়ার পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এর আগের তিন মাসে বেড়েছিল প্রায় ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com