মার্কিন বিচার বিভাগের তদন্তকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বাড়ি থেকে আরো ছয়টি গোপন নথি পেয়েছেন। প্রেসিডেন্টের ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের বাড়িতে ১৩ ঘণ্টা অনুসন্ধান চালিয়ে এই নথিগুলো পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বাইডেনের আইনজীবী।
এর আগে শুক্রবার উইলমিংটনের বাড়ি থেকে আরো কিছু নথি জব্দ করা হয়েছিল। সেগুলো বাইডেন সেনেটর থাকাকালীন এবং বারাক ওবামার সরকারে ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়কার নথি।
আইনজীবী বব বাওয়ের বলেন, ‘হাতে লেখা ব্যক্তিগত নোট’ এবং ‘আশেপাশের আরো কিছু সামগ্রী’ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাইডেন এবং তার স্ত্রী সে সময় বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না।
শনিবার এক বিবৃতিতে বাওয়ের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়কার রেকর্ড এবং সম্ভাব্য গোপন জিনিসপত্র অনুসন্ধানের জন্য তার পুরো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে বিচার বিভাগ বা ডিওজেকে অনুমোদন দিয়েছেন।’
এই মাসের শুরুর দিকে বাইডেনের আইনজীবীরা বলেছিলেন যে, প্রথম ধাপের গোপন নথিগুলো গত ২ নভেম্বর পেন বাইডেন সেন্টারে পাওয়া যায়।
রেকর্ডের দ্বিতীয় ব্যাচ পাওয়া যায় ২০ ডিসেম্বর তার উইলমিংটনের বাড়ির গ্যারেজ থেকে। এরপর ১২ জানুয়ারি বাড়ির একটি স্টোরেজ স্পেস থেকে আরেকটি নথি পাওয়া যায় বলে তার আইনজীবীরা জানান।
নথিগুলো খুঁজে পাওয়ার পর, প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে তার দল অবিলম্বে সেগুলো জাতীয় আর্কাইভস এবং বিচার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে বাইডেন কেন ওই নথিগুলো তার কাছে রেখে দিয়েছিলেন তা স্পষ্ট নয়।
প্রেসিডেন্সিয়াল রেকর্ডস অ্যাক্টের অধীনে নিয়ম অনুযায়ী, হোয়াইট হাউজের যেকোনো রেকর্ড প্রশাসনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জাতীয় আর্কাইভে পাঠিয়ে দিতে হয়, যেখানে সেগুলো সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সংবেদনশীল নথিগুলো কিভাবে রাখা হয়েছিল তা তদন্তে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিশেষ কাউন্সেল রবার্ট হুরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা তা ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে দীর্ঘ অনুসন্ধান এবং পরবর্তীতে আরো নথি বেরিয়ে আসার এ ঘটনা তার জন্য রাজনৈতিক মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
বাইডেন এবং তার স্ত্রী জিল ডেলাওয়্যারের উপকূলীয় শহর রেহোবোথ বিচে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাচ্ছেন, যেখানে তাদের আরেকটি বাড়ি রয়েছে।
জানুয়ারির শুরুতে ওই বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। তবে এখানে কোনো নথি পাওয়া যায়নি। বাইডেনের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবিসি উত্তর আমেরিকার সংবাদদাতা অ্যান্থনি জার্চার বলেছেন, দুই মাসের ব্যবধানে বাইডেনের এই গোপন নথিগুলো আবিষ্কার করা হয়, মধ্যবর্তী নির্বাচনের কয়েক দিন আগে। তবে এই খবর প্রকাশ করা হয় জানুয়ারিতে।
ওই সব খবরে প্রেসিডেন্টের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বাইডেনের দল জোর দিয়ে বলেছে যে, প্রেসিডেন্ট বিচার বিভাগের তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।
বাইডেন বিষয়টিকে একটি তদারকির অংশ হিসেবে দেখছেন, তিনি বলেছেন যে নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে এই গোপন নথিপত্র পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে না আনার বিষয়ে তার ‘কোনো অনুশোচনা নেই’।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার ফ্লোরিডা মার এ লাগোর বাসভবনে শত শত গোপন নথি অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
এফ বি আই গত আগস্টে তার ফ্লোরিডার হলিডে হোমে অভিযান চালানোর আগ পর্যন্ত ট্রাম্প এবং তার আইনজীবীরা নথিগুলো হস্তান্তর করতে বাধা দিয়েছিল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে, এফবিআই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে আরো সুবিধাজনক আচরণ করছে।
সূত্র : বিবিসি