ফরচুন বরিশালের জয়রথ থামালো সিলেট স্ট্রাইকার্স। ষোলআনা শিহরণ ছড়ানো ম্যাচে হাসিমুখে মাঠ ছাড়লো মাশরাফীর দল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে সাকিবের বরিশালকে ২ রানে হারিয়েছে তারা। একইসাথে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রাখলো সিলেট। এদিকে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়ের পর হারের তেতো স্বাদ পেল বরিশাল। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচেও একই দলের কাছেই পরাজিত হয় কীর্তনখোলা পাড়ের দলটি।
যেই শান্তকে নিয়ে কতো কথা, কতো সমালোচনা, কতো ধুয়োধ্বনি; সেই শান্তকে নিয়েই আজ স্লোগান উঠলো মিরপুর শের-ই-বাংলাতে। সব সমালোচনার জবাব যেন ব্যাট হাতেই দিলেন তিনি। মাত্র ১৬ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে টেনে তুলেছেন শান্ত, এনে দিয়েছেন ১৭৩ রানের সংগ্রহ। শেষ পর্যন্ত শান্ত অপরাজিত ছিলেন ১১ চার আর ১ ছক্কায় ৬৬ বলে ৮৯ রানে।
এর আগে মিরপুরে আজ টসে জিতে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের হাতে বল তুলে দেন সাকিব। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে ভুলেননি পাকিস্তানি এই বোলার, সেই ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে ভেঙে দেন সিলেটের টপঅর্ডার; তুলে নেন তিন-তিনটি উইকেট।
দারুণ ছন্দে থাকা জাকির হাসানকে ওভারের প্রথম বলেই ০ রানেই ফেরান ওয়াসিম। ওভারের পঞ্চম বলে ওয়াসিমের শিকার হোন তৌহিদ হৃদয়, ফেরেন মাত্র ৫ রান করে। আসরের প্রথম ধাপের ঢাকা পর্বে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন হৃদয়। তবে চট্টগ্রাম পর্ব মিস করেন তিনি হাতের চোটে পড়ে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ঢাকা পর্বের শুরুটা ভালো হলো না তার। আর ওভারের শেষ বলে গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফেরেন মুশফিকুর রহিম।
মাত্র ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে এইদিন উদ্ধার করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টম মরিসকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শান্ত। দুজনের ৭৪ বলের জুটিতে আসে ৮১ রান। এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান, স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফেরান ৪০ রান করা টম মরিসকে। জুটি ভাঙলেও শান্ত হয়নি শান্তর ব্যাট, এবার থিসারা পেরেরাকে সাথে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি।
থিসারা পেরেরাকে নিয়ে মাত্র ২৫ বলেই ৫০ রানের জুটি গড়ে তোলেন শান্ত। সেই জুটি ভাঙে ৪০ বল থেকে ৬৮ রান আসার পর। ১৬ বলে ২১ রান করে ফেরেন থিসারা পেরেরা, ১৮ বলে ৩৭ রান আসে শান্তর ব্যাটে। ইমাদ ওয়াসিম ২ বলে ৫ রান করে রিটায়ার্ট হার্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন ইনিংস পরিসমাপ্তির ১ বল আগে। শেষ বলে চার হাঁকালে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৭৩ রান।
ওয়াসিম জুনিয়রের ৩ উইকেটের পাশাপাশি একটা করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও কামরুল ইসলাম রাব্বি।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভালো শুরু পায় বরিশাল। উদ্বোধনী জুটিতে ৪.৫ ওভারে আসে ৪২ রান। জীবন পেয়েও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি সাইফ হাসান, চারটি ছক্কায় ১৯ বলে ৩১ রান করে আউট হন তিনি। পজিশন পরিবর্তন করেও ভাগ্য বদলাতে পারেননি এনামুল হক বিজয়, আজ ওয়ানডাউনে নেমে ৮ বল থেকে মাত্র ৩ রান করে আউট হন বিজয়। ৭ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে আসে ৪৬ রান।
এরপর মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। শুরু থেকেই পুরনো ছন্দ ধরে ব্যাট করতে থাকেন বরিশাল অধিনায়ক। ইবরাহীম জাদরানকে নিয়ে ঠিক রাখেন দলের গতিপথ। তবে এরপরেই সিলেটকে ম্যাচে ফেরান রেজাউর রহমান রাজা, এক ওভারেই আউট করেন এই দু’জনকে। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে ভাঙেন ইবরাহীমের উইকেট, আর শেষ বলে ফেরান সাকিবকে। সাকিব তিন চার আর ১ ছক্কায় করেন ১৮ বলে ২৯ রান। ইবরাহীমের ব্যাটে আসে ৩৭ বলে ৪২।
জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা থেকে পাল্টা আক্রমণে যেতে প্রমোশন দিয়ে করিম জানাতকে নামিয়ে দেয় ফরচুন বরিশাল ম্যানেজমেন্ট। পরিকল্পনা কাজেও দেয়, মাশরাফীর এক ওভারে তিনটা ছক্কা হাঁকান জানাত। আউট হবার আগে ১২ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে মোমেন্টাম ফিরিয়ে দেন তিনি। ৪ ওভারে জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন তখন ৪১ রান।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৪ বলে ৭ রান করে আউট হলে শেষ ওভারে এসে জয়ের জন্য বরিশালের প্রয়োজন হয় ১৫ রান। তবে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান রেজাউর রাজা। সেই ওভারের প্রথম বলে ফেরান ইফতেখারকে, ১৩ বলে ১৭ রান করেন এই পাকিস্তানি। পরের বলেই ৭ রান করে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মিরাজ। শেষ দুই বলে মোহাম্মদ ওয়াসিম ১০ রান আদায় করে নিলেও, তা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি। মাত্র ২ রানে হেরে যায় ফরচুন বরিশাল।
বল হাতে এইদিন ৪ ওভারে ৪১ রান দিলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিলেটকে উইকেট এনে দিয়েছেন রাজা, এমনকি শেষ ওভারের সমীকরণের সামনেও করেছেন দারুণ বল। সব মিলিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন রাজা। দুটো করে উইকেট নেন তানজিম সাকিব ও মোহাম্মদ আমির।