বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান আইনজীবীকে ‘কুপিয়ে হত্যা করল’ ইসকন সদস্যরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল বন্ধ ঘোষণা অহিংস গণঅভ্যুত্থানের আহ্বায়কসহ ১৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ চিন্ময়কে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে ভারতের বিবৃতি মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

চার কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে

বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩
  • ৬২ বার

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন
-এক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন ২৪.৪০ শতাংশ
-রিজার্ভ কমেছে ২৯.৭৭ শতাংশ

চার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্যের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও এতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধিকেই অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দেশের সার্বিক অর্থনীতির সর্বশেষ তথ্য নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, এক বছরে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে টাকার বিপরীতে। গত বছরের এক মার্চ যেখানে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হয়েছে ৮৬ টাকা। সেখানে গত ৬ মার্চ আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে প্রতি ডলার পেতে ব্যয় করতে হয়েছে ১০৬ টাকা ৯৮ পয়সা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানিকৃত সব পণ্যের দামই বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যের উৎপাদনের উপর। এতে বেড়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে যেখানে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ, সেখানে জানুয়ারিতে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত অর্থবছরের শুরু থেকেই চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ কমে যায়। ব্যাংকগুলো পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রয়োজনীয় ডলার সংস্থান করতে পারছিল না। এর ফলে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের এক মার্চ প্রতি ডলার পেতে যেখানে ব্যয় করতে হয় ৮৬ টাকা, ৩০ জুন এতে তা বেড়ে হয় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। আর গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে এসে তা আরো বেড়ে হয় ১০৫ টাকা ৫১ পয়সা। আর এ বাড়ার হার অব্যাহত রয়েছে। ৫ মার্চ শেষে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে হয় ১০৬ টাকা ৯৮ পয়সা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী ডলারের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয় আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম দিকে সব ব্যাংকের সঙ্কট মেটাতে ডলার সরবরাহ করলেও রিজার্ভ কমে যাওয়ায় পরবর্তীতে শুধু সরকারের অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটায় সরকারি ব্যাংকগুলোর ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সাথে ডলারের পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করার জন্য নীতিমালা কঠোর করা হয়। প্রথমে বলা হয় শতভাগ ডলার সরবরাহের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে হবে। পরবর্তীতে ৩০ লাখ ডলার বা তার বেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে তদারকি করা হয়। এতে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমে গেলেও রিজার্ভের নিম্নগতির ধারা থামানো যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপর রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের ১ মার্চ যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার, ৩০ জুন এসে তা কমে হয় ৪১.৮২ বিলিয়ন ডলার। গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে তা আরো কমে হয় ৩২.৩৩৩ বিলিয়ন ডলার। আর গত এক মার্চ তা আরো কমে হয় ৩২.৩০ বিলিয়ন ডলার। এ থেকে আরো এক বিলিয়ন ডলার কমে যাবে আকুর দায় পরিশোধের পর। সবমিলেই রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি শেষে ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে তা আরো বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর এ বছর জানুয়ারিতে তা আরো বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি দামে পণ্য আমদানির ফলে দেশীয় বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন। এর মধ্যে আমদানিজনিত কারণেই মূল্যস্ফীতিতে বেশি চাপ পড়েছে। সবমিলে মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে এসেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে তা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণ গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যেখানে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ, সেখানে গত বছরের ডিসেম্বরে এসে তা না বেড়ে বরং কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকে নগদ টাকার প্রবাহ কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ হলো আমানতপ্রবাহ বাড়ছে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখীর কারণে মানুষ আগের মতো আর সঞ্চয় করতে পারছে না। বরং অনেকেই সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। এতে কমে গেছে আমানত প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, সেখানে গত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তা কমে হয়েছে মাত্র ১.২৩ শতাংশ। একদিকে আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। বিপরীতে কমেছে ঋণ আদায়। সবমিলেই টাকার প্রবাহ কমে গেছে। এতে কলমানি মার্কেটের সুদহার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন উপকরণের (যেমন- রেপো, বিশেষ রেপো, তারল্য সহায়তা) মাধ্যমে টাকা ধার নেয়ার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোর বেড়েছে তহবিল ব্যবস্থাপনার হার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এখন টাকার প্রবাহ কমানো ছাড়া অন্য কোনো উপকরণ নেই। আর টাকার প্রবাহ কমিয়ে এখন মূল্যস্ফীতির হার খুব বেশি কমানো যাবে না। টাকার প্রবাহ কমালে বেসরকারি খাতে ঋণ আরো কমে যাবে, তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো স্থবির হয়ে পড়বে। এতে মানুষের আয় কমে যাবে। এ অবস্থায় ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়ে দেশের অর্থনীতিতে আরো মন্দা জেঁকে বসবে। তাদের মতে, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে টাকা পাচার ও হুন্ডি বন্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমাতে হবে। এতে টাকার অবমূল্যায়নজনিত মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমানো যাবে। এটি শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের সব সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ খাতে কাজ করতে হবে। একই সাথে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। বেশির ভাগ পণ্যের দামই অহেতুক বাড়ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করলে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমানো সম্ভব। এজন্য বাজার নিয়ন্ত্রণের সাথে যারা জড়িত তাদের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com