বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিরবের পরকীয়ার অভিযোগ নিয়ে সুর পাল্টালেন স্ত্রী ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে কী কথা হলো, জানালেন মির্জা ফখরুল ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান

সাকিব আল হাসান; সুবাসিত এক ফুলের নাম

এনবিডি নিউজ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০২৩
  • ৫৬ বার

সাকিব আল হাসান, ২২ গজের ভূলোকে বিমোহিত-বিমুগ্ধতা ছড়ানো এক নাম। বিশ্ব সেরার তকমায় আর অপার সব কীর্তিগাঁথায় সাফল্যের শেখরে সমাসীন এক নাম। বাংলার ক্রিকেটের এক মহা স্তম্ভ তিনি, ভূমিকাটা ঐতিহাসিক চীনের প্রাচীরের ন্যায় দূর্ভেধ্য-দূর্বার। এই বঙ্গে উদিত অসংখ্য তারার ভিড়ে তিনি এক সূর্য্যসম, যার শুভ্র রশ্মি ৫৭ হাজার বর্গমাইলের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়েছে দূর দিগন্তে, বিশ্বজুড়ে!

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলার পথিকৃৎ-পথ প্রদর্শক তিনি। বাঘের গর্জনে বিশ্ব কাঁপাতে পথচলা তার দিগন্ত জুড়ে। বাঁহাতের কারুকার্যে বিস্মিত বিশ্বকে পরিচয় দিয়েছেন আমি বাংলার, আমি বাঘেদের একজন। শত মাইল দূরত্বেও নিদ্রাহীন বাঙালীর বাঁধন হারা উল্লাস আর বাধঁভাঙ্গা উচ্ছাসের উপলক্ষ তিনি, একবার-দু’বার নয়, বার বার; অসংখ্য-অগণিত বার। বঙ্গদেশের অর্জনের গর্জন তিনি, প্রতিবাদের হুংকার। তিনি লাল সবুজের অহংকার।

কিন্তু আজ থেকে ঠিক ১৭ বছর পূর্বে, কে ভেবেছিলো চুপচাপ স্বভাবের এই লিকলিকে ছেলেটাই বিশ্বের বুকে বাংলার পরিচয় হবে? হ্যাঁ, সম্ভাবনা নিয়েই এসেছিল, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ভাবা হয়েছিল, তাই বলে যে বাংলার ক্রিকেটের মহানায়ক হয়ে যাবে, তা কে জানতো! যদি বুঝা যেত, এই হ্যাংলা-পাতলা বাচ্চা ছেলেটিই বাংলার হাজারো দিনের বিনিদ্র রাত্রির অপেক্ষার প্রহর ঘোচাবে, আক্ষেপের আধাঁর দূর করে তার হাতেই সোনালী ভোরের উদয়ন হবে, আফসোস আর আক্ষেপের তিক্ততা মুছে সুখানুভবের তৃপ্তি দেবে, তবে কি আর প্রস্তুতি ম্যাচের পারফর্ম দেখেই তাকে মূল্যায়ন করে ফেলে?

সময়টা তখন ২০০৬। পরবর্তী বিশ্বকাপে ভালো করার প্রস্তুতিতে বিভোর বাংলাদেশ দল। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ে সফরে। ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে তখন তিন নতুন মুখ, সাকিব, মুশফিক আর ফরহাদ রেজা। তাদের মাঝে ফরহাদ রেজার অভিষেকটা হয়ে গেছিলো তৃতীয় ম্যাচেই।

কিন্তু দলে রফিক, রাজ্জাক, কপালির মতো তুখোড় স্পিনার ছিলো বলে সাকিব আর পাইলট থাকায় মুশফিকের সুযোগ হচ্ছিলো না দলে। কিন্তু এরই মাঝে বাংলাদেশ দল ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে যাওয়ায় তরুণদের দেখে নেয়ার তত্বে শেষ ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিটা গায়ে উঠে দু’জনের। তারই সাথে হারারের মাঠে সূচনা হয় এক নতুন দিনের, বাংলার ক্রিকেট আকাশে দেখা মেলে নতুন সূর্যের।

ওই দিন রাজ্জাক, রফিক, রাজিনদের সাথে হাত ঘুরিয়ে তুলে নেন ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে, ৩.৯০ ইকোনমিতে একটি উইকেট। এল্টন চিগাম্বুরাকে সাজঘরের পথ দেখান বাঁ হাতের মায়াবী বিভ্রমে বোকা বানিয়ে, স্ট্যাম্প ছত্রখান করে। যা হোক, জিম্বাবুয়ের ১৯৮ রানের দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শাহরিয়ার নাফিসের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ দল তখন জয়ের পথে, ইতোমধ্যে রাজিন আর আফতাব বিদায় নিলে চার নম্বরে দেশের পক্ষে প্রথমবার ব্যাট হাতে নামেন তরুণ সাকিব।অপরাজিত থেকে যখন ম্যাচ জয় করে ফেরেন, ততক্ষণে ৪৯ বলে করে নিয়েছেন ৩০ রান।

সেই যে শুরু… অতঃপর আজ। এরই মাঝে হাজারো দিন ফুরিয়েছে, মাসের পর মাস পেরিয়েছে, হারিয়েছে এক এক করে ১৭টি বছর। এরই মাঝে দেশকে দিয়েছেন অনেক কিছু, এনে দিয়েছেন অসংখ্য জয়ের সুখানুভূতি জাগানিয়া অধ্যায়।

কখনো যদিও ব্যর্থ হয়েছেন, তবে তার থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। ব্যর্থ হয়ে দমে যাননি, ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লড়াই করে ছুটে চলেছেন অগ্রপানে। যার ফলাফল এসেছিলো ২২ জানুয়ারি ২০০৯ সালে। যে দিন দূর হয়েছিল সব হাহাকার, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছিল উঁচু শিরে। যার সবটাই সাকিবকে ঘিরে। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় সে যে বিশ্ব সেরার সিংহাসনে সমাসীন!

এরপর থেকে যেন ব্যাটে-বলে সমতালের সেরার আসনটা একেবারে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে ফেলেছেন সাকিব। এমনকি বিশ্বসেরার এই আসনে সমাসীন হয়ে সাকিন গড়ে ফেলেছেন একটা ইতিহাসও। ইয়ান বোথাম, কপিল দেব, জ্যাক ক্যালিস বা গ্যারি সোবার্সের সাথে যেই সাকিবের তুলনা হয় অহরহ, সেই সাকিব তাদেরও ছাপিয় গেছেন একটা দৌঁড়ে। এমনকি রজার ফেদেরার কিংবা সেরেনা উইলিয়ামসের মতো তারকারাও সেই দৌঁড়ে তার পেছনে।

হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সাকিব আল হাসান টানা ৩২৪ সপ্তাহ ওয়ানডে ক্রিকেট র‍্যাকিংয়ের শীর্ষে থেকে পেছনে ফেলেছেন সেরেনার ৩১৬ সপ্তাহ শীর্ষে থাকার কীর্তি। যা এককভাবে কারো টানা শীর্ষস্থান দখলে রাখার বিশ্ব রেকর্ডও বটে!

একজন সাকিব আল হাসানকে নিয়ে লিখতে গেলে হাজারো পৃষ্ঠার প্রয়োজন হবে। দিনের পর দিন সময় ফুরোবে। তাতেই কি সাকিব আল হাসানকে ফুটিয়ে তোলা যাবে? তার মূল্যায়ন করা হবে? কিভাবে হবে বলুন, সাকিব তো শুধু বাংলার ক্রিকেট নয়, সমস্ত খেলাতেই বাংলার আদর্শ, বাংলার প্রেরণা। তার হাসিতে গোটা দেশ হেসে উঠে, যার চোখে চোখ রেখে এই জাতি স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখে বিশ্বজয়ের।

প্রিয় সাকিব, হবে নাকি এবার! হবে কি অপেক্ষার অবসান, বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরার, একটা চুমু খাওয়ার!

তবে শিরোপা আসুক না আসুক, এক সাকিব বাংলার ক্রিকেটের অনেক বড় পাওয়া। রুগ্নতার চাদরে মুড়ানো বাংলার ক্রিকেটের সাদা-কালো মলিন পোস্টারটিকে ক্ষণে ক্ষণে সরিয়ে তিনিই তো নতুন ছবি আঁকতে শুরু করেছেন বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের কালিতে।

তাইতো সব সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে উচ্চস্বরে বলতে ইচ্ছে করে, ‘বাইশগজের বাগানে সাকিব এমনই এক গৌরবময় ফুলের নাম, যার সুবাসে আজ গোটা বিশ্ব মাতাল।’

আজ সেই সুবাসিত ফুলের ৩৫ তম জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন সাকিব আল হাসান।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com