ইফতারিতে ফল যেন বাঙালির নিত্য উপাদান। ফল ছাড়া যেন ইফতারি জমেই না। স্বাস্থ্যবিদরাও সারাদিন রোজা রাখার পর ভাজা-পোড়া না খেয়ে ফল-ফলাদি, জুস খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু সব কিছুর দাম বৃদ্ধির মতো ফলের দামও এখন আকাশছোঁয়া। তাই এ পবিত্র রমজানেও ইফতারির টেবিলে ফল যেন অধরা হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ফলের দামই এখন চড়া। গত বছরের রমজানের থেকে প্রতিটি ফলের দামই বেড়েছে। আপেল, কমলালেবু, আঙুর, আনারের দাম রমজানের আগে থেকেই বেড়েছে। সে দাম এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য ফলের দোকানে ক্রেতাও কমে গেছে।
বাজারে দেখা যায়, আপেল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা দরে, কমলা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০ টাকা, আঙুর বিক্রি হচ্ছে সবুজ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কালো আঙুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং আনার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে।
এ ছাড়া ইফতারির অন্যতম উপাদান তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কোথাও ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। আবার কোথাও আকারভেদে ১২০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কলার ডজন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, পেয়ারা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কুল ৮০-১০০ টাকা, সফেদা-আতাফল ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেগুনবাগিচায় দেখা যায় পেঁপে, তরমুজ ও আনারস কেটে ছোট প্যাকেটে করে বিক্রি হচ্ছে। ছোট প্যাকেটের দাম রাখা হচ্ছে ২০ টাকা করে। সোহেল নামে এক বিক্রেতা জানান, দাম বেশি হওয়ার কারণে সবাই পুরোটা কিনতে পারে না। আবার অনেকে ব্যাচেলর থাকেন, রিকশাওয়ালারাও চলতি পথে ইফতারি করেন। এ জন্য কেটে বিক্রি করছি। ফল কিনতে দোকানে আসা ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশির ভাগই বেশি দামের কারণে হতাশ। বেশি দাম হওয়ায় পরিবারের আবদার থাকার পরও বেশি পরিমাণ কিনতে পারছেন না। কোনো রকম দু-একটি আইটেম কিনে বাসায় ফিরছেন, তাও চাহিদার চেয়ে কম।
বাসাবো বাজারে ফল কিনতে আসা শেখ আরিফ বলেন, গত বছরের থেকে এবার প্রতিটি ফলের দামই ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার সবজিসহ অন্য সব জিনিসের দাম বেড়েছে। বাড়িতে ইফতারি আইটেম তৈরি করা গেলেও ফল তো কিনতে হয়। বাসা থেকে কিনতে বলেছে। কিন্তু কিভাবে কিনব, পকেট তো ফাঁকা। তার পরও সন্তানদের আবদার মেটাতে এক কেজি আপেল কিনেছি।
সেগুনবাগিচায় ফল কিনতে আসা তবিবর রহমান বলেন, চাল-ডালের চেয়ে ফলের দাম বেশি। ইফতারিতে বাসার চাহিদা থাকে ফলের, আবার আজ বাড়িতে মেহমান আসবে তাই কিছু ফল কিনলাম। কিন্তু প্রতিটি ফলের দামই বেশি।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফলের দোকানে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। ফলের দোকানে ক্রেতা আসছেন, তবে কিনছেন কম। কেউ কেউ দরদাম করছেন আর কেউ কেউ দাম শুনে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অল্প কিছু ফল কিনছেন।
মুগদার ফল বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, দুপুর ১২টায় দোকান খুলেছি। বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুই হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। ক্রেতা তেমন নেই। যে দু-চারজন আসে তারাও দাম শুনে চলে যায়। মাঝে মধ্যে দু-একজন কেনে। কিন্তু আগে যাদের কাছে একসাথে হাজার টাকার ফল বিক্রি করতাম, তারাও এখন অর্ধেক কিনছেন। তিনি বলেন, গত বছরের রমজানের থেকে এবার ফলের দাম বেড়েছে। এ কারণে মানুষ ফল কিনতে চাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইফতারে যেসব ফলের চাহিদা বেশি থাকে, তার মধ্যে বেশির ভাগই আমদানি করতে হয়। এলসি জটিলতার কারণেও এবার ফল আমদানি কম হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশী ফলকে ‘বিলাসীপণ্য’ দেখিয়ে এবার অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় সব ফলের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। এ কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।