Sat, 23 Nov 2024, 04:28 am

দলীয় ও জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি এক নয়

Reporter Name
  • Update Time : Saturday, October 19, 2019
  • 239 Time View

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) ভিন্নমত প্রকাশের অভিযোগে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি থাকা উচিত কিনা, তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বিপক্ষে আর কেউ পক্ষে মত দিচ্ছেন। আমিও যে একসময় ছাত্রলীগ করেছি এবং তখন ছাত্র রাজনীতি কেমন ছিল সে বিষয়ে এর আগে আমি এই পত্রিকার কলামে (নয়া দিগন্ত, ২৮/০৯/২০১৯) কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি ছিলাম সিরাজগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন সভাপতি। সেটা ১৯৫৫ সালের কথা। তখনো আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে ‘মুসলিম’ শব্দটি ছিল এবং ওই বছরই শব্দটি বাদ দিয়ে নাম রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। তখন আমার বয়স মাত্র ১৭ বছর। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট সেন্টোতে (সেন্ট্রাল ট্রিটি অরগানাইজেশন) যোগ দিলে এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করি। আমাকে কাগমারী সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি যাইনি। মাওলানা ভাসানী আমাকে দলীয় রাজনীতিতে যোগ দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি যোগ দেইনি। এর কারণ ছিল ছাত্র হিসেবে আমি মনে করতাম তখন ছিল আমার জ্ঞান অর্জনের সময়। ছাত্র হিসেবে পড়াশুনা করাই আমার কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। দলীয় রাজনীতি নয়। সেন্টোতে যোগদানের বিরোধিতা করেছিলাম জাতীয় স্বার্থে, কোনো দলীয় স্বার্থে নয়। ছাত্র সমাজের কাজ তো এটাই। যখন তারা দেখবে জাতীয় স্বার্থ বিপন্ন হচ্ছে তখন তাদের সোচ্চার হতে হবে। একে কখনোই দলীয় রাজনীতির মধ্যে আনা যাবে না। যেমন ছিল ভাষা আন্দোলন। কারণ, তখন ছাত্ররা জানত ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সে মূর্খ হয়ে যাবে। তার কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে। সে চাকরি পাবে না। তখন ছাত্ররা এগিয়ে এলো। তখন রাজনীতিকরাই বরং ব্যাকফুটে ছিল। জাতির কোনো ক্রান্তিলগ্নে যখন কোনো ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হয়, যখন ছাত্ররা দেখে তাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে তখন তারা এগিয়ে আসতে পারে। এই কিছু দিন আগেই আমরা তাদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করতে দেখেছি। স্কুল কলেজের লাখ লাখ ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রাস্তায় নেমে এসে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করে। এটা হলো জাতীয় সমস্যা। কারণ, প্রতিদিন সড়কগুলোতে যে মৃত্যুর মিছিল চলছে তা বন্ধের দাবিতে তারা আন্দোলন করে। তাই আমি বলছি, ছাত্রদের রাজনীতি করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক। প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্র টিকবে না। এখনকার ছাত্ররাইতো আগামী দিনের নেতৃত্ব। আমাদের দেশের ক্ষমতায় বা বিরোধী দলে যারা রয়েছেন তাদের তো বয়স হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের জন্য তৈরি করা তাদের কর্তব্য। সারা দুনিয়ায় স্বৈরাচারদের ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ তারা দ্বিতীয় কাউকে নেতৃত্বের জন্য তৈরি করে না। তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো তারা দৃশ্যমান উন্নয়ন করে। তারা হাইওয়ে, পাতাল রেল, বিশাল সেতু, বিশাল কোনো ভবন নির্মাণ করে- মানুষের নজর কাড়ে এমন অবকাঠামো তৈরি করে। পৃথিবীর সব দেশের স্বৈরাচারী শাসনের ক্ষেত্রেই এটা সত্য। আইডিবির মিশনে আমার পৃথিবীর বহু দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে এটা আমি দেখেছি। আমি যখন সিরিয়ায় মিশনে ছিলাম তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বর্তমান প্রেডিডেন্ট বাশার আল আসাদের পিতা হাফিজ আল আসাদ। দেখি সবখানে শুধু আসাদ আর আসাদ। জনগণকে আসাদের নামে বুঁদ করে রাখা হচ্ছে। প্রতি ঘরে ঘরে, প্রতিটি জায়গায় শুধু আসাদের ছবি। আমার সঙ্গে আসাদের সাক্ষাতও হয়েছিল। সেখানে ‘ফাইভ স্টার প্লাস’ হোটেলে আমাদের থাকতে দেয়া হয়। অদ্ভুত সুন্দর হোটেল। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আমি এমন হোটেল খুব কম দেশেই দেখেছি। কুয়ালালামপুরে দেখেছি। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় দেখিনি, মিসরেও দেখিনি। মিশনে গেলে সাধারণত ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতেই থাকতে দেয়া হতো। কিন্তু ‘ফাইভ স্টার প্লাস’ হোটেল কাকে বলে তা আমি দামেস্কে দেখেছি। সবখানে আসাদের ছবি ও তার ভাস্কর্য দিয়ে ভরা ছিল।

পাশাপাশি রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে তফাৎটিও আমি দেখেছি। নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন রাষ্ট্রনায়ক। ২৭ বছর জেলে ছিলেন। কিন্তু জেল থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন যারা তাকে জেলে পুরেছিল। তিনি বলেছিলেন, আমাদের হোয়াইটও প্রয়োজন। তিনি মহান হয়েছেন। আফ্রিকাতে এমন দূরদর্শী আরো কয়েকজন নেতা ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের উপমহাদেশে এমন দূরদর্শী লোকের অভাব দেখছি। আমি হয়তো মহত্মা গান্ধীর কথা বলতে পারি। তার অহিংস আন্দোলনের জন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। আব্রাহাম লিংকনের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারা শত্রুকে ক্ষমা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছিলাম তখন নাইজেরিয়াত গৃহযুদ্ধ চলছিল। যা বাইফ্রা গৃহযুদ্ধ নামে পরিচিত। নাইজেরিয়া সরকার ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বাইফ্রা রাজ্যের মধ্যে এই গৃহযুদ্ধ বাঁধে। আমার এক সহপাঠী ছিল ইকন। আমি, ইকন, একজন ল্যাটিন আমেরিকান ও একজন ইন্ডিয়ান মিলে একটি গ্রুপ করেছিলাম। এত বেশি পড়াশুনা করতে হতো যে আমাদের পক্ষে তা সামাল দেয়া সম্ভব হতো না। ফলে আমরা বিষয় ভাগ করে প্রেজেন্টেশন দিতাম। ওই ইকন ছিল খ্রিষ্টান এবং বাইফ্রার সমর্থক। সে একদিন এসে বলে যে ফেডারেল আর্মি বাইফ্রা দখল করে নিয়েছে। ও ভেবেছিল তখন ওর ফেলোশিপ বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু ফেডারেল সরকার ওর ফেলোশিপ পিএইচডি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেয়। অথচ আমি পাকিস্তানে তার উল্টোটি দেখেছি। আমিও পাকিস্তান সরকারের ফেলোশিপ নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমার ফেলোশিপ কেটে দেয়া হয়। কারণ স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাকে বলা হলো তোমার হোম ডিপার্টমেন্ট অনুমতি না দিলে আমরা তোমার ফেলোশিপ কেটে দেবো। আমার হোম ডিপার্টমেন্ট অনুমতি দেয়নি। আফ্রিকার লোকজনের উদারতা, আর পাকিস্তানের নেতাদের উদারতার মধ্যে এই পার্থক্য আমি দেখেছি।

তাই আমি বলছি আমাদের রাজনীতি, আমাদের স্টেটম্যানশিপ, স্টুডেন্ট পলিটিক্স- এই সবগুলো পরস্পর সংযুক্ত। আমাদের ছাত্রদের জন্য আমাদের রাজনীতির একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের জন্য দলীয় রাজনীতির প্রয়োজন নেই। নিষিদ্ধ করার কথা বলা খুব সহজ। ছাত্রদের কি অধিকার নেই? ওদের যখন স্বার্থ নষ্ট হতে দেখবে ওরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে না? কোটাবিরোধী আন্দোলনতো ওদের স্বার্থেই। সেটা কি রাজনীতি? এটা তাদের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন। কিন্তু ছাত্রদের দলীয় রাজনীতি করার বিপক্ষে। জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি থাকবে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তারা এগিয়ে আসবে। আমার নিজের জীবনের শিক্ষা থেকেই এটা আমি বলছি। এর আলোকে বুয়েটের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডটিকে আমি ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে অভিহিত করতে চাই। আবরার ফাহাদ নামের ছাত্রটি জীবন দিয়ে ছাত্রদের দলীয় লেজুরবৃত্তির রাজনীতি করার পরিণাম সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে গেল। ভিন্নমতকে সহ্য করতে না পারলে কোনো জাতি কখনো সামনে এগুতে পারবে না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের চুক্তি নিয়ে আবরার যা লিখেছে সেটা সঠিক না বেঠিক সেই বিতর্কে আমি যাবো না। কিন্তু তার কথা বলার অধিকার কেন আমরা স্বীকার করব না? একজনের বক্তব্য আরেকজনের পছন্দ নাও হতে পারে। তাতে দোষ নেই। এ নিয়ে তার সাথে কথা বলা যায়, তার সঙ্গে বিতর্ক করা যায়। এতে সমাজ বিকশিত হবে। সমাজের বিকাশের জন্য ভিন্নমতকে সম্মান জানানো জরুরি। যারা আবরারকে পিটিয়ে মেরেছে তারাও মেধাবী ছাত্র। তাদের জন্য আমার দুঃখ হয়। এখন ওই ১৯ জন ছাত্রের কেরিয়ার ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের অনেকে নিম্নবিত্ত ঘরের সন্তান। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তাদের মানুষ করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু ওদের এভাবে বিপথগামী করার দায়িত্ব কে নেবে? এর দায়িত্ব তো আমাদের সমাজের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার। কেন তাদের নৈতিক ভিত্তি তৈরি করা হলো না। কেন তাদের শিক্ষার মধ্যে নীতি-নৈতিকতাকে স্থান দেয়া হলো না। আমি মনে করি প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মান অনুযায়ী মৌলিক ধর্মীয় শিক্ষা, বিশেষ করে বিশ্বের বড় বড় ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া উচিত। তাকে সহনশীলতার শিক্ষা দেয়া উচিত। কোনো ধর্মই মারামারি করতে বলেনি। এই শিক্ষা দিতে হবে যাতে সহপাঠীর প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা, প্রেম গড়ে ওঠে। কিন্তু এই নৈতিক শিক্ষার অভাবে সেই সহানুভূতি হারিয়ে গেছে। কারণ তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়নি। আর সে কারণে ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে সহপাঠীকে পিটিয়ে মারার মতো নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটছে।

আমার কর্মজীবনের অর্ধেক সময় আমি শিক্ষকতা করেছি। সিরাজগঞ্জ কলেজ থেকে শুরু। পাপুয়া নিউগিনি, নাইজেরিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করেছি। কিন্তু কোথাও আমাদের এই দেশের মতো দলীয় রাজনীতি দেখিনি। আমার বেশিরভাগ সময় শিক্ষার্থীদের সংস্পর্শে কেটেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি শেষ করে পাপুয়া নিউগিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যোগ দেই। সেখানে গিয়ে দেখি পশ্চিমা দুনিয়ার অর্থনীতির তত্ত্বের সঙ্গে ওখানকার জনগণের চরিত্র মেলে না। তখন আমি সেখানকার সংস্কৃতি, নৃবিজ্ঞান অধ্যয়ন শুরু করি। নৃবিজ্ঞান বিষয়টি আমার পছন্দের ছিল। আর ছিল ইতিহাস। আমি পাপুয়া নিউগিনিবাসীর জীবনযাত্রা বোঝার চেষ্টা শুরু করি। পরে পলিনেশিয়ান ও মেলেনেশিয়ান অর্থনীতি নিয়ে লিখি। এ বিষয়ে আমার লেখা ইউনেস্কো থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আমি সেখানে ছাত্র রাজনীতি দেখিনি। আমি প্রথম যখন পাপুয়া নিউগিনি যাই তখন সেটি অস্ট্রেলিয়ার শাসনাধীন। আমি সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলন দেখেছি। স্যার মাইকেল সোমারে সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি এক সময় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আমার বাসায়ও তিনি এসেছিলেন। তখন দেখেছি পাপুয়া নিউগিনির স্বাধীনতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু সেখানে ছাত্রদের অংশগ্রহণ ছিল না। ছাত্ররা সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু সরাসরি মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেনি। কোনো রাজনৈতিক দলও ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে টেনে আনার চেষ্টা করেনি। ১৯৭৫ সালে দেশটি স্বাধীন হয়। তখন দেশটির প্রথম গভর্নর হন স্যার জন গাইস। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মাথায় তিনি পদত্যাগ করে নির্বাচনে দাঁড়ান এমপি হওয়ার জন্য। কারণ ছিল তিনি জনগণের সঙ্গে মিশে কাজ করতে চান। আমাদের এখানে এটা কল্পনা করা যায় না।

একই প্যাটার্ন আমি আমেরিকাতেও দেখেছি। আমি যখন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করি, সেটি ছিল তখনকার সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসে ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রী ছিল। তখন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিস্ট স্যার জন ওয়াল্টার এডামস। দুই বছর পর তিনি ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- স্যার আপনি পদত্যাগ করলেন কেন? তিনি বললেন, আমার প্রশাসনিক কাজ পছন্দ নয়। গবেষণামূলক কাজ করতে আমি ভালোবাসি। তিনি পদত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা বলে আমরা তোমাকে ‘পয়েন্ট ফোর’ দেব। শিক্ষকদের মূল্যায়নের জন্য এই নাম্বার দেয়া হতো। আর ‘পয়েন্ট ফোর’ ছিল সর্বোচ্চ নাম্বার। সেখানেও ছাত্র রাজনীতি দেখেছি। তবে জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি। রাজনৈতিক দল ছিল। ডেমোক্রেটিক, রিপাবলিকান ছিল। অনেক ছাত্র সমাবেশ হতো, কিন্তু কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের স্লোগান শুনিনি। সেখানে গবেষণামূলক কাজ না থাকলে শাস্তি পেতে হয়। গবেষণা কর্ম প্রকাশ করতে হবে। পাবলিশ অর পানিশ- এটা পশ্চিমা প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লোগান। এর পুরোপুরি বিপরীত চিত্র দেখা যায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

তাই আমি বলছি, ছাত্ররা করবে জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতি। রাষ্ট্রের যদি কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় হয়, বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু হয়, যেমন : আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে তখন ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়বে, সেটা রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য। এটা একটি মহাকারণ। ছাত্ররা রাজনীতি করবে মহাকারণের জন্য। মহাকারণে ছাত্র রাজনীতিকে আমি সমর্থন করি কিন্তু দলীয় লেজুরবৃত্তির রাজনীতিকে আমি সমর্থন করি না। দলীয় রাজনীতি ছাত্রদের জন্য নয়। নিষিদ্ধ করা সহজ কিন্তু সংস্কার করা কঠিন। ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। এর যোগ্য করে তাদের গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 WeeklyBangladeshNY.Net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com