Sat, 23 Nov 2024, 03:53 am

পরিবারের বোঝা মাথায় নিয়ে চাঁদের কণা নিজেই চলেন হুইল চেয়ারে

Reporter Name
  • Update Time : Saturday, October 19, 2019
  • 211 Time View

নামের সাথে জীবনের গল্পটাও যেন মিলে গেছে। চাঁদের যেমন নিজস্ব আলো নেই, ঠিক তেমনি চাঁদের কণা নামের প্রতিবন্ধী এ মেয়েটির জীবনেও এখন ঘোর অমানিশা। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও কাক্সিক্ষত চাকরি পাচ্ছেন না তিনি। দীর্ঘ দিন থেকে হুইল চেয়ারের চাকায় ভর করে সীমিত পরিসরে চলাফেরা করলেও মাথার ওপরে তার পরিবারের বোঝা। এ অবস্থায় যোগ্যতা অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সম্মানজনক চাকরি চান তিনি। পরিবারকে বাঁচাতে একটি চাকরির দাবিতে দুই দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনশন করছেন সিরাজগঞ্জের শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা। ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করার পরও ভালো কোনো চাকরি পাচ্ছেন না তিনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়েছে তার ওপর। ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনাও এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মা দুনিয়া ছেড়েছেন ২০১০ সালে। ছোট ভাই দুটোকে মায়ের আদর দিয়ে বড় করার পাশাপাশি তাকে এখন পরিবারের আর্থিক দায়িত্বও নিতে হচ্ছে। তার একমাত্র দাবি, যোগ্যতার হিসেবে তাকে যেন বিশেষ বিবেচনায় নন-ক্যাডার হিসেবে প্রথম শ্রেণীর কোনো পদে চাকরি দেয়া হয়। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎও চান তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে চাঁদের কণার সাথে হয় এ প্রতিবেদকের। চাঁদের কণা জানান, কাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে কাজিপুরেরই এম ইউ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কাজিপুর থানা সদর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ইডেন কলেজে ভর্তি হই। ২০১২-১৩ সেশনে আমি অনার্স এবং ২০১৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ করেছি। এখন ভালো একটি চাকরি না হলে পুরো পরিবার নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে।
চাঁদের কণা আরো জানান, আমার ছোট দুই ভাই পড়াশোনা করছে। ছোট ভাই মোতালেব এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে আর রিপন আগামীতে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেবে। ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা বাবা আবদুল কাদেরের প্রতিদিনে ওষুধ কেনার টাকাও নেই। খুবই অসহায় অবস্থার মধ্যে আমার পরিবার। চাঁদের কণা আরো জানান, জন্মের ৯ মাসের মধ্যেই পোলিও আক্রান্ত হয়ে তিনি তার হাঁটার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। হাতে ভর দিয়ে কিংবা অন্য সহযোগিতায় তাকে চলতে হয়। এ অবস্থাতেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন তিনি। এখন সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। সরকারি চাকরির বয়সও তার চলে যাচ্ছে। তাই যোগ্যতার ভিত্তিতে ও মানবিক বিবেচনায় একটি সম্মানজনক চাকরি চান তিনি। যদিও গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে সিরাজগঞ্জ জেলার সমাজসেবা অফিসে অস্থায়ীভাবে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি দেয়া হয়। কিন্তু চাঁদের কণা ওই চাকরিতে শেষ পর্যন্ত যোগদান করেননি।

যেহেতু আপনি সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি করতে চান তা হলে কেন প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা চাচ্ছেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, আমি প্রতিবন্ধী। সবার মতো সব জায়গায় যেতে পারি না। স্বাভাবিকভাবে অন্য কাজও করতে পারি না। প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনাও করতে পারি না, তাই বিশেষ বিবেচনায় আমি প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পা প্রার্থনা করছি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 WeeklyBangladeshNY.Net
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com