দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পেঁয়াজ। হাটে, ঘাটে, মাঠে, চায়ের আড্ডায় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে জায়গা করে নিয়েছে পেঁয়াজ। এ সময়ে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত গড়ায়। পেঁয়াজের নামটি প্রথম আলোচনায় আসে ভারত সরকার কর্তৃক রফতানিমূল্য তিন গুণ বাড়িয়ে দেয়ার পর। দ্বিতীয় দফায় পেঁয়াজের দাম আলোচনায় আসে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক রফতানি নিষিদ্ধ করার পর। এরই মধ্যে ভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুদামজাতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কারসাজিকারদের পাকড়াও করা হচ্ছে। দেশসেরা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করানো হচ্ছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশী পেঁয়াজের দাম। আর আমদানি করা নি¤œমানের পেঁয়াজের জন্যও ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ আগের চেয়ে কম আসছে। এ কারণে পাইকারিতে চড়া দাম। তাদের দাবি, কাওরান বাজারের আড়ত থেকে ভালো মানের দেশী পেঁয়াজ ১০০ টাকায় কিনে এনে খুচরায় কমে বিক্রি করা সম্ভব নয়। পাইকারির তুলনায় খুচরায় কেজিতে কেন ২০ টাকা বেশি দামÑ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। এ কারণে ব্যবধান বেড়ে যাচ্ছে। নতুন দেশী পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম তেমন কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তারা। যদিও টিসিবি এবং কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তাদের হিসাবে, প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে ২৯ সেপ্টেম্বরের আগে খোলা এলসির ৫০০ টন পেঁয়াজ ভারতে এখনো আটকে আছে।
এ ছাড়া ২৯ সেপ্টেম্বর খোলা এলসির আরো সাড়ে তিন হাজার টন পেঁয়াজের বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। কয়েক দফা বৈঠকের পর পুরনো এলসির এক হাজার টন পেঁয়াজ ৪ অক্টোবর দেশে আসে। বাকি ৫০০ টন পেঁয়াজ এখনো আটকে আছে। আমদানিকারকরা জানান, ভারত সরকার ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। সে দিনই প্রায় সাড়ে তিন হাজার টনের মতো পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়। ভারতীয় সেই সাড়ে তিন হাজার টন পেঁয়াজের এলসির বিষয় নিয়ে ভারতের আদালতে মামলা হয়েছে। মামলার রায়ের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিন্ধান্ত জানা যাবে।
এ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন জানায়, পেঁয়াজের দাম নিয়ে যখন ক্রেতাদের ঘুম হারাম, ঠিক তখনই পেঁয়াজ নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ১৩ ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আটজন ও কক্সবাজারের পাঁচজন। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। কারসাজির মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করার নেপথ্যে থাকা এসব ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টের বিরুদ্ধে অহরহ প্রমাণও মিলেছে। যে কারণে তাদের সবার নাম উল্লেখ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। তদন্তে আসা ১৩ জনের মধ্যে আছেÑ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের হাশেম ট্রেডার্স, এমএইচ ট্রেডিং কোম্পানি, সৌমিক ট্রেডার্স, এশিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এআর ইন্টারন্যাশনাল, কাওসার ট্রেডার্স, রফিক সওদাগর এবং এসআর ইন্টারন্যাশনাল। কক্সবাজারের মাদরাসা রোডের এআর এন্টারপ্রাইজ, টেকনাফের ছোটহাজি মার্কেটের এসএস ট্রেডিং, কুলালপাড়ার মেসার্স জাবেদ এন্টারপ্রাইজ, কলেজপাড়া এলাকার মেসার্স কবির অ্যান্ড সন্স এবং চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, শিং মাছ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, মাগুর ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, সুরমা ৪৫০ টাকা, পাঙ্গাশ ১৩০ টাকা, রুই ২৩০ থেকে ৩০০ টাকা, কাতলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, কোরাল ৪৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং প্রতি কেজি রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিরও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে আরো পাঁচ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়ে সোনালি মুরগি (কক) ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ডিমের হালি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
এ দিকে হঠাৎ করেই বেড়েছে কাঁচামরিচ ও আলুর দাম। শুক্রবার সকালে কাওরান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১০০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর কেজি-প্রতি আলুর দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে আট টাকা। যে আলু গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২২ টাকা। তা গতকাল বিক্রি হয় ২৫ থেকে ২৮ টাকা। বাজারে টমেটো, শিম ও গাজর অবস্থান করলেও দাম কমছে না সবজিগুলোর। খুচরা বাজারে এখনো টমেটো ও শিম বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। শীতের সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর মুলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।