‘ন্যায়সঙ্গত’ দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি পালনে সবসময় অনুমতির অপেক্ষায় থাকতে চায় না বিএনপি। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানে অনুমতি চাওয়ার যে নিয়ম রয়েছে তা দলটি অনুসরণ করবে ঠিকই, কিন্তু অনুমতি না পেলেও আগামীতে ‘শান্তিপূর্ণ’ উপায়ে সব কর্মসূচি সফল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে দলটি এমন নজির স্থাপন করেছে, যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভারতের সাথে দেশবিরোধী চুক্তি ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশটি বিএনপি অনুমতি ছাড়াই সফল করেছে। ওই সমাবেশের অনুমতির জন্য দলের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা মহানগর পুলিশ কার্যালয় গেলেও অনুমতি মেলেনি। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড কর্মসূচি বাতিল না করে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করেছে, যা গত ১০ বছরেও দেখা যায়নি।
বিএনপির সভা-সমাবেশ ঘিরে নানামুখী প্রতিবন্ধকতা কিংবা পুলিশের কড়াকড়ি নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের কমপক্ষে দুই বছর আগে থেকেই এই ধারা চলছে। অনুমতি ছাড়া এই সময়ে বলতে গেলে একটি সমাবেশও করতে পারেনি বিএনপি। যেসব সমাবেশের অনুমতি মিলেছে, তাও ছিল নানামুখী শর্তযুক্ত। সাম্প্রতিক সময়ে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে বিএনপির মধ্যে এই বাধা ডিঙানোর প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রায় নিয়মিতই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে দলীয় কার্যালয়ের আশপাশে কিংবা রাজধানীর অন্যত্র মিছিল সমাবেশ করেই চলছেন। প্রথম দিকে এসব মিছিলে নেতাকর্মীদের সংখ্যা কম থাকলেও ইদানীং সব মিছিলে নেতাকর্মীদের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। জানা গেছে, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আরো কয়েক মাস আগে যখন এসব মিছিল শুরু করেন, তখন দলের ভিতরে কেউ কেউ তার সমালোচনায় লিপ্ত হন। কিন্তু এখন তা প্রশংসা কুড়াচ্ছে। ২০-৩০ জনের সেই সব মিছিল এখন হরহামেশা শতাধিক নেতাকর্মীতে রূপ নিয়েছে।
জানা গেছে, গত ৩ অক্টোবর জেলায় জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি ছিল বিএনপির। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে কেন্দ্র থেকে প্রতিটি জেলার সমাবেশে একজন করে কেন্দ্রীয় নেতা পাঠানো হয়েছিল। বহু জেলায় সমাবেশের অনমুতি না মিললেও বাধা উপেক্ষা করে তা সফল করেছে বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি কোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবে না। প্রতিটি কর্মসূচি পালনের জন্য আগামীতেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া হবে। কিন্তু অনমুতি না দিলে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেমে থাকবে না। সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অনুমতি না দিলেও কর্মসূচি পালন করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি কিংবা ন্যায়সঙ্গত দাবি দাওয়া আদায় যদি সবসময় অনুমতিনির্ভর হতো তাহলে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক বহু আন্দোলন সফলের মুখ দেখত না। তিনি বলেন, যখন কোনো সরকার নিবর্তনমূলক আচরণ করে পুলিশ দিয়ে সব রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নিতে চায়, তখন জনগণ কিন্তু অনুমতির অপেক্ষায় থাকে না। তারা একটি পর্যায়ে রাজপথে বের হয়ে আসে।
রিজভী বলেন, বিএনপি সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়া কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে অবহিত করার যে কালচার রয়েছে, সেটি সবসময় অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সবসময় অনুমতির দোহাই দিয়ে আটকে রাখা যায় না।
গত ১৩ অক্টোবর বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নাগরিক শোক র্যালি করতে দেয়নি পুলিশ। এর পরপরই আগামী ২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। অনুমতি না পেলেও এই কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ড. কামাল হেসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো আন্দোলন করে যেতেই হবে। পারমিশন দেবে, না দেবে- আমাদের করেই যেতেই হবে।’
ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে বলেছেন, যদি ২২ তারিখের সমাবেশের অনুমতি দেয়া না হয়, যদি বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তারপরও তারা কর্মসূচি পালন করবেন।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সূত্র মতে, আগামী ২২ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করার টার্গেট নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন।