বাড়ছে বাজেটের আকার। সেই সঙ্গে আসছে বাজেটে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণও। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সর্বকালের রেকর্ড ঘাটতি বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। আর আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৫০ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। তবে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
এদিকে গত ৪ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে বাজেট ঘাটতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ২ থেকে ৩ শতাংশ। তবে এই অঙ্ক চূড়ান্ত নয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তার আগের বছর এই ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের বার্ষিক আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ সব সময়ই বেশি। তবে করোনা মহামারীর পর শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে যে বৈশ্বিক মন্দা চলছে, তা কবে শেষ হবে এটা কেউই বলতে পারছেন না। যার ফলে সরকারের আয় আরও কমে গেছে। অথচ ব্যয় বেড়েছে। ফলে বছর শেষে সরকারের বাজেট ঘাটতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ হারে। এতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিও চাপের মুখে পড়েছে।
তবে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার অর্থ বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা করছে সরকার। এতে হয়তো বাজেট ঘাটতির চাপ কিছু কমতে পারে। অবশ্য ডলার সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে শুরু করেছে সরকার। এদিকে বাজেট ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এর অংশ হিসেবে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
আগামী বাজেটে মোট রাজস্বপ্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা চার লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে চার লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া আছে। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য থাকায় নতুন বাজেটে সরকারকে বিভিন্ন উৎসব থেকে ধার করতে হচ্ছে।
এদিকে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র আড়াই মাস বাকি। বছর শেষে এ ঘাটতি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া সুদের হার কমানোয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। যার ফলে ৭ মাসে সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানমতে, চলতি র্অবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকঋণ বেড়েছে ৭৭ শতাংশ। যে হারে ব্যাংকঋণ বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।