প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের লাগাম টানা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। চীন ছাড়িয়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে গেছে আরও ৩২টি দেশে। এতদিন ওই দেশগুলোয় শুধু আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিললেও, এখন চীনের বাইরে এতে মানুষ মারা যাচ্ছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৬০ জন।
এর মধ্যে শনিবার ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ১০৯ জনের। আর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জন। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত এ রোগে ১৬ জনের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো ইতালিতে একজন ও ইরানে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ইরানে কোভিড-১৯ রোগে ৫ জনের মৃত্যু ঘটল। এখন পর্যন্ত ইতালিতে ৩০ ও ইরানে ২৮ জনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় ১০টি শহরে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল, কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন চলছে করোনা-আতঙ্ক। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সেখানে ৪৩৩ জন কোভিড-১৯ আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। লেবানন ও ইসরায়েলেও প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে সন্ধান মিলেছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত এক বাংলাদেশির।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে চীন বা অন্য কোনো বিষয়ের সঙ্গে স্পষ্ট যোগসূত্র নিশ্চিত হতে না পারায় ভাইরাসটিতে আক্রান্তের কিছু সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার প্রধান ডা. টেডরস আধানম গেব্রেয়াসাস বলেন, ভাইরাসটিকে ঠেকানোর মতো সুযোগ সীমিত বা সংকীর্ণ হয়ে আসছে।
ডা. টেডরস বলেন, চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু সংক্রমণের ধরন উদ্বেগজনক। যেসব সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে না, অর্থাৎ প্রাদুর্ভাবের শিকার এলাকায় ভ্রমণ করার কোনো উল্লেখ নেই অথবা আগে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসারও কোনো উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে না, সেসব সংক্রমণ নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’ ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেই সঙ্গে ডা. টেডরস জোর দিয়ে বলেন, চীন এবং অন্য দেশগুলো সংক্রমণ ঠেকাতে যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এর সঙ্গে মোকাবিলা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন করে যাতে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আর না হয়, তা ঠেকাতে সব দেশকে আরও পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্য ও প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সেখানে আরও দুজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে এক বাংলাদেশিও আছেন। গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে আরব আমিরাতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১১ জনে। যাদের মধ্যে তিনজন এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
বিবৃতিতে আরব আমিরাতের মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন আক্রান্ত দুজনের মধ্যে ৩৪ বছর বয়সী এক ফিলিপিনো ও ৩৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি রয়েছেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত চীনা রোগীর সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। তবে এখন তারা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছেন। দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় যারা এ রোগীদের সংস্পর্শে ছিলেন তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব প্রয়োজনীয় ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে বিশেষ জোর দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এর আগে সিঙ্গাপুরে ৫ বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে আইসিইউতে থাকা একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন।