আর মাত্র দুই বা তিন দিন পর রোজার ঈদ। মানুষ ভিড় করছেন নিত্যপণ্যের বাজারে। একটাই উপলক্ষ- পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো খাবারের আয়োজনে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করা।
কিন্তু সেই আনন্দ ম্লান হচ্ছে বাজারে এসে। সেমাই থেকে শুরু করে চিনি, ভোজ্যতেল, পোলাও চাল, ঘি, মাংস, মসলাসহ সব ধরনের নিত্যপণ্য বাড়তিমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
এতে সাধ থাকলেও সাধ্য মেটাতে হিমসিম খাচ্ছেন অধিকাংশ ক্রেতা। এর মধ্যে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। বুধবার রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ঈদের তুলনায় প্রতিকেজি খোলা চিকন সেমাই ৪০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। খোলা লাচ্ছা সেমাই কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । প্রতিকেজি পোলাও চাল ৩০ টাকা, চিনি ৪০ টাকা, গরুর মাংস ৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ৫০ টাকা, খাসির মাংস ১৫০ টাকা, জিরা ২৫০ টাকা, দারুচিনি ৩০ টাকা, লবঙ্গ ৩০০ টাকা, দেশি আদা ৬০ টাকা, দেশি হলুদ ৭০ টাকা, রসুন ৫০ টাকা, পেঁয়াজ ১৫ টাকা, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ২০ টাকা, প্রতিকেজি গুড়া দুধ ১৬০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ১২ পিসের প্যাকেট নুডুলস ২৫ টাকা, ৪০০ গ্রাম প্যাকেটের পাস্তা ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশে একাধিক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ঈদ ঘিরে অসাধু ব্যাসায়ীদের বাড়তি মুনাফার প্রবণতায় এক শ্রেনীর ভোক্তার পরিবারের জন্য ভালো খাবার আয়োজন দূরহ হয়ে পড়েছে। যা দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা থাকলেও বিভিন্ন কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে ক্রেতাদের ঠকতে হচ্ছে। এর থেকে বের হয়ে আসতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। পাশাপাশি অসাধুদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে ভোক্তারা সুফল পাবে।
নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন কাজী হায়দার আলী। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গত বছর রোজার ঈদে ২০০ গ্রামের প্রতিপ্যাকেট চিকন সেমাই ৩৫ টাকা করে কিনলেও এবার ৪৫ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। পাশাপাশি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। যা আগে ১৫০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই কিনতে হয়েছে ৫০ টাকা। যা আগে ৪০ টাকা ছিল। পাশাপাশি প্রতিকেজি পোলাও চাল কিনেছি ১৪০ টাকা। যা ১১০ টাকা ছিল। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা। যা গত বছর রোজার ঈদে ৬৮০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১৫ টাকা, সেই মুরগি ১৬০-১৬৫ টাকা ছিল। প্রতিকেজি চিনি কিনতে হয়েছে ১২০ টাকা, যা ৮০ টাকা ছিল।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০ গ্রামের মিল্কভিটা ঘি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদে বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা। প্রতিকেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকা, যা আগে ৩৮০-৪৫০ টাকা ছিল। দারুচিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ টাকা, যা আগে ৫০০ টাকা ছিল। প্রতিকেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা, যা আগে ১২০০ টাকা ছিল। দেশি আদা প্রতিকেজি ২৩০ টাকা, গত বছর রোজার ঈদে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। দেশি হলুদ ১২০ টাকা, আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা, যা আগে ১৬৫ টাকা ছিল। এছাড়া গুড়া দুধের মধ্যে প্রতিকেজি ডানো প্যাকেটজাত ধুদ বিক্রি হচ্ছে ৮৬০ টাকা, যা আগে ৭০০ টাকা ছিল। ফ্রেস ব্র্যান্ডের প্রতিকেজি গুড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা। যা আগে ৭২০ টাকা ছিল। ১২ পিসের প্রতিপ্যাকেট ম্যাগিনুডুলস বিক্রি হচ্ছে ২৪৫ টাকা, যা আগে ১২০ টাকা ছিল। ৪০০ গ্রামের প্রতিপ্যাকেট পাস্তা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা আগে ৭৫ টাকা ছিল।
রাজধানীর কাওরান বাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. আল আমিন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিবছরই রোজা ও ঈদ ঘিরে বিক্রেতারা সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায়। এবারও সেটাই করেছে। সবারই ইচ্ছা হয় ঈদের ছুটিতে ঘরে পরিবারের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন করতে । কিন্তু আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে অনেক কিছু কাটছাট করতে হয়। এবারও করতে হচ্ছে।
বুধবার বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, রোজা ও ঈদ ঘিরে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সব ধরনের কাজ করা হয়েছে।
বাজারে একাধিক টিম তদারকি করছে। পাশাপাশি পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজি করলে সংশ্লিষ্টদের অধিদপ্তরে তলব করা হয়েছে। সভা করে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অসাধু পন্থায় কেউ অতিমুনাফা করলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।