বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের সম্পর্ক উপলক্ষে আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে ওয়াশিংটনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সোমবার বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনের রাস্তার দুই পাশে সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান, পানির বোতল ছোড়াছুড়ি, হাতাহাতি প্রভৃতি ঘটনার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৪ জন আহত হন। অপরদিকে পাল্টাপাল্টি পানির বোতল নিক্ষেপ করায় আওয়ামী লীগের ২ এবং বিএনপি’র এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হলেও পরবর্তীতে নেতৃবৃন্দের অনুরোধে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। খবর ইউএনএ’র।
বিশ্বব্যাংকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে সরকার ও দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ‘জয় বাংলা সমাবেশ’ এর আয়োজন করে। অপরদিকে কমিটিবিহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র পক্ষ থেকে তাদের ভাষায় ‘ভোটার বিহীন রাতের ভোটে নির্বাচিত’ সরকারের অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হামলা, গুম, খুনের প্রতিবাদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
সোমবার সকাল ৭টা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তরের সামনের রাস্তার এক পাশে সমাবেত হতে থাকে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ৭টার দিকে থেকে বিশ্বব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে উভয় কর্মসূচিতে দলীয় নেতা-কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে ১০/১২জন দলীয় নেতাকর্মী অবস্থান নেয়। এসময় বিএনপির নেতা-কর্মীর সংখ্যা ছিলো দেড় শতাধিক। শুরু হয় শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান। ঘটনার সময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রথম কার্যকরী সদস্য ও সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী শাহানা রহমান বাংলাদেশের পতাকা হাতে রাস্তার মাঝে চলে আসলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং তাদের কেউ কেউ রাস্তার মাঝে চলে আসে। ঘটনার আকস্মিকতায় ড. সিদ্দিকুর রহমান ও তার সাথে থাকা আওয়ামী লীগের অন্যান্য কর্মীরাও রাস্তার মাঝে চলে আসলে শুরু হয় ধাক্কা-ধাক্কি, মারামারি। এসময় ড. সিদ্দিকুর রহমান লাঞ্ছিত এবং আঘাতপ্রাপ্ত হন। ড. সিদ্দিকুর রহমানের বা হাতে আঘাত করা হলে তিনি অনেকক্ষণ রাস্তার উপর বসে কাতরাতে থাকেন। এসময় শাহানারা রহমানও আঘাতপ্রাপ্ত হন বলে তিনি অভিযোগ করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতির খবর পেয়ে ৪/৫জন পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে উভয় দলের মধ্যে আবার ধাক্কা-ধাক্কি, মারামারি শুরু হয়। এসময় বিএনপি’র একজন কর্মী রাস্তায় পড়ে গেলে তালে কিল-ঘুরি আর লাথি মারা হয়। এসময় বিএনপি ঐ কর্মী রক্তাক্ত হলে তাকে আম্বুলেন্স যোগে স্থানীয় হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এরপরও দফায় দফায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র কর্মসূচিতে দলীয় নেতা-কর্মীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে উত্তেজনা, হুমকি-ধুমকি, শ্লোগান, পাল্টা শ্লোগান। দৃশ্যত আওয়ামী লীগের সমাবেশে দেড়-দু’শ নেতা-কর্মী আর বিএনপির সমাবেশে ৫/৬শ নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি দফায় দফায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং পানির বোতল ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ আওয়ামী লীগের ২ কর্মী আর বিএনপি’র এক কর্মীকে আটক করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
এদিকে গত মঙ্গলবারও রিজ কার্টনের সামনে বিক্ষোভ চলাকালে বেশ ক’জকন নেতকর্মী আহত হয় বলে জানা গেছে।
সাধারণ প্রবাসীরা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আসলে আওয়ামী লীগ- বিএনপির মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া এমনকি মারামারির ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ আছে। কিন্তু এবার সেই ধরনের ঘটনার ঘটেছে ওয়াশিংটনে। যা দেখে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমনকি রাজনীতির বাইরে থাকা অনেক প্রবাসী ছি.. ছি.. করছেন। তাদের ভাষায় এ ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন করেছে।