করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীর সামনে বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে এর সংক্রমণ কমে এলেও এটি বিশ্বের ৫৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু কিছু দেশে এর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাকি বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। ফলে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির চাকা রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সভা সেমিনার খেলাধুলার আয়োজন এমনকি জুমার নামাজ বাতিল করার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে যে ভয়াবহ বিপদের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে তা সমসাময়িককালে পৃথিবীতে আর দেখা যায়নি। এ জন্য বিশ্ব নেতারা ও বিশ্ববাসীর কী করণীয়Ñ সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে এ নিয়ে দেশে দেশে রাজনীতি হতে দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলার চেয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার নজির আমরা দেখতে পাচ্ছি।
২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার নয় শ’র বেশি মানুষ। চীনের বাইরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ছাড়াচ্ছে ইরান, ইতালি, দণি কোরিয়া ও জাপানে। ইরানে একজন সংসদ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমা ইবতেকারও এতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে করোনা সংক্রমণ এড়াতে শুক্রবার জুমার নামাজ বাতিল করা হয়। জাপান ও ইতালি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা করোনা নিয়ন্ত্রণে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। অন্য দিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একচোট নিয়েছেন বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটদের ওপর। তিনি করোনা ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সংবাদমাধ্যমকেও দায়ী করেছেন। সামান্য একটি ভাইরাস যার অস্তিত্ব চোখে ধরা পড়ে না তার আক্রমণে এভাবে মানুষের ধারশায়ী হয়ে যাওয়া অকল্পনীয়। অতি ক্ষমতাধর চীনা কমিউনিস্ট নেতৃত্ব করোনা ঝাঁকুনিতে একেবারে পর্যুদস্ত। কিন্তু চীনা বিপদ শেষ পর্যন্ত বাকি বিশ্বের জন্য কতটা বিপদ নিয়ে আসবে এ ব্যাপারে কেউ কোনো পূর্বাভাস দিতে পারছে না।
এ দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৫ বিশেষজ্ঞ করোনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। কমিশনের সদস্যরা চীন ভ্রমণ করেছেন। তারা সরেজমিন এর প্রাদুর্ভাব নিয়ে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনে তারা পরামর্শ রেখেছেন যাতে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো উপকৃত হতে পারে। ওই প্রতিবেদনে জোর দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জরুরি সতর্কতা গ্রহণের জন্য। এ ব্যাপারে সরকার ও সমাজকে সামগ্রিকভাবে সম্পৃক্ত রাখার কথা প্রতিবেদনে বলেছেন তারা। খবরে জানা যাচ্ছে, সতর্কতা ও সম্পৃক্ততার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। আমাদের দেশে যদিও এখনো করোনা শনাক্ত হয়নি। তবে চীনের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে পরিচালিত বেশ কিছু প্রকল্পে চীনারা কাজ করছেন। শিক্ষা ব্যবসাবাণিজ্যসহ নানা কাজে চীনের সাথে রয়েছে বাংলাদেশের দৈনন্দিন সম্পর্ক। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সে হিসেবে আমাদের প্রস্তুতি নেই।
করোনায় মৃত্যুর হার দুই শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু এর সংক্রমণে যে ভীতি ও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে সেটি ভয়াবহ ব্যাপার। আক্রান্ত দেশগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। যেমন চীন উহান প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সারা দেশের বেশির ভাগ রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে সব কিছুই এক প্রকার স্থবির হয়ে যায়। একই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোতেও। এভাবে সারা বিশ্বে যদি ব্যাপক হারে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পুরো বিশ্বই স্থবির হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ থেকে দেখা দিতে পারে মহামন্দার। যা পুরো বিশ্বকে নতুন আরেক বিপদের মুখোমুখি করতে পারে। এই ধরনের ভাইরাসের উৎপত্তি ও ছড়িয়ে পড়া নিয়ে মানুষের ভাবনা জরুরি একটি বিষয়। একইভাবে মানুষ নিজে থেকে এ ভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষম নয়। মানুষেরই কর্মকাণ্ডের ফলে এই বিপদে নেমে এসেছে পৃথিবীতে। আর নিজেদের নৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর সমাধান আসতে পারে। এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীর গভীর ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।