রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

‘পুলিশই পাথর জোগাড় করে বলেছিল, মারো’

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০
  • ৩১৭ বার

উন্মত্ত ভিড়টাকে যেন পুলিশই নেতৃত্ব দিচ্ছিল। পুলিশ ইঙ্গিত দিতেই পড়িমরি ছুটতে লাগল জনতা। তার পরেই শুরু হলো পাথরের বৃষ্টি। গত সপ্তাহে ভাইরাল হওয়া সেই ক্লিপে স্পষ্ট দেখা যায়, সে দিন পাথর ছুড়েছিল সয়ং দিল্লি পুলিশও। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পরে সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব দিল্লির খজুরী খাস এলাকার ওই মহল্লায় যান বিবিসি-র এক সাংবাদিক। তাকে হিমাংশু রাঠৌর নামে এক স্থানীয় যুবক জানান, সে দিন পুলিশই তাদের পাথর জোগাড় করে দিয়ে বলেছিল, ‘মারো’।

ঘটনা চক্রে, সেই সময়ে আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যাতে আবার দেখা যায়, পুলিশই নিশানায়। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে উন্মত্ত জনতা। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ঘটনা বলে এই ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করেছিলেন বিজেপির সদস্য তথা এক প্রাক্তন সেনা অফিসার। কিন্তু ভিডিওটি যে দু’মাস আগেকার এবং গুজরাতের ঘটনা, তা প্রমাণ হয়ে যাওয়ার পরেই ‘পাথর-ছোড়া পুলিশের’ ভিডিও নিয়ে আরো বেশি সমালোচনা শুরু হয়।

ভারতের দিল্লিতে সংঘর্ষ চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের প্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে গতকাল সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাৎ সেরে কেজরীবাল যেভাবে দিল্লি পুলিশের ‘গুজব মোকাবিলার’ প্রশংসা করেন, তা নিয়ে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে আবার সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাল দিল্লি পুলিশকে।

দিল্লির খজুরী খাস থানা এলাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা, পুলিশি সহায়তা কেন্দ্রের গা ঘেঁষে সে দিন পাথর ছুড়েছিল পুলিশ। ঘটনার সপ্তাহখানেক পরে ঠিক সেই এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সাথেই কথা বলেন বিবিসি-র সাংবাদিক। কচুরির দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা গেরুয়া তিলক পরা হিমাংশুর মতো রাস্তার ও-পারে পোড়া বাড়ি আগলে পড়ে থাকা ভুরা খানের কথাতেও উঠে আসে ‘পুলিশি তৎপরতার’ কথা।

তার কথায়, ‘পুলিশের সাথেই সে দিন আমাদের বাড়ি-দোকান জ্বালাতে এসেছিল ওরা। সব শেষ হয়ে গেল, পুলিশ শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল!’ সে দিন কোনো রকমে ছাদে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচেন ভুরা খান।

বিবিসির প্রতিবেদনে গত সপ্তাহের আরো একটি ভিডিও উঠে এসেছে। যেখানে দেখা যায়, ফয়জান নামের এক যুবক ও তার জনা চারেক সঙ্গীকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলে ‘জনগণমন’ গাইতে বাধ্য করেছিল দিল্লি পুলিশ। দিন চারেক আগে হাসপাতালে মারা যান ফয়জান। যে কর্দমপুরী এলাকায় তার বাড়ি, সেখানেও যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি।

ভাইয়ের শেষকৃত্য সামলাতে সামলাতেই ফয়জানের ভাই বলেন, ‘পুলিশ ভাইটাকে এমনভাবে মেরেছিল যে ও দাঁড়াতে-বসতেও পারছিল না। মারের চোটে গোটা শরীরটা নীল আর কালো হয়ে গিয়েছিল।’

প্রাণভয়ে সে দিন ‘জনগণমন’ গাইতে হয়েছিল রফিককেও। ফয়জানের মতো তার শরীর জুড়ে কালশিটে। প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিন্তু পুলিশের ওই মার এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে।

তিনি বলেন, ‘সে দিন থেকে বাড়িতেই পড়ে আছি। ভয়ে হাসপাতাল যেতেও পারিনি।’

ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে মুখ খুলছেন স্থানীয়রাও। তবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা একটি অভিযোগ নিয়েও মুখ খুলতে চায়নি।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com